ইংল্যান্ডের আয়েশি জীবন ছেড়ে কেন খাগড়াছড়ির বনে থাকছেন মাহফুজ রাসেল?
লেখাপড়া শেষ করে বসবাস করছিলেন ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার শহরে। সেখান থেকে অ্যামাজন বনে গিয়ে মাহফুজ আহমেদ রাসেল থেকেছেন ওখানকার বাসিন্দারের সাথে। অবশেষে এসে থিতু হয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ির গহীন বনে।
তিনি ছয় বছরের প্রচেষ্টায় খাগড়াছড়ির, মাটিরাঙ্গার পূর্ব খেদাছড়া এলাকায় গড়ে তুলেছেন নিজস্ব সংরক্ষিত বনাঞ্চল। যেখানে নিজের জায়গায় নিজেই থাকেন উদ্বাস্তুর মতো। আর বন্যপ্রাণীদের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন ২৩ একর এলাকা ।
তার এমনটি করার কারণ কী? কেনই বা তিনি ইংল্যান্ডের আয়েশি জীবন ছেড়ে জঙ্গলে বসবাস করাকে বেছে নিলেন?
তিনি এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানান,খাগড়াছড়ি মাটিরাঙ্গার পূব খেদাছড়া এলাকার আশেপাশের বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি আমি। এটা শুরু করেছিলাম আজ থেকে ৬ বছর আগে। শুরুটা করেছিলাম আমি যখন ম্যানচেস্টার থেকে পূর্ব খেদাছড়ার অর্জুনটিলায় আসি। শহরে থাকতে না পারার কারণে আমি এখানে আসি। এজন্য আমি পাহাড়ে একটি ছোট জায়গা নিয়ে থাকা শুরু করি। অ্যামাজনের ভিতরে আমি অনেক দিন ছিলাম। ওখানকার বাসিন্দাদের সাথে লম্বা সময় কাটিয়েছি আমি। যারা নিজেদের সকল প্রয়োজনে প্রকৃতি উপর নির্ভরশীল তারা কতটুকু সুখে আছে.. ওই জিনিসটা জানার আমার খুব কৌতুহল ছিল। এটা জানতেই আমি চলে যাই অ্যামাজন জঙ্গলে। আমি যখন এখানে আসি তখন এখানে এতো গাছপালা ছিল না। শীত আসলে শিকারিরা সব বন্য প্রাণী শিকার করে নিয়ে যেত। তাদেরকে অনেক বুঝিয়ে গত ৬ বছরে এই অঞ্চলে শিকারের পরিমান ৫০ ভাগ কমিয়েছি।
তিনি জানান, শিকার কমিয়ে লাভ নেই। আগে বন ছিল ওখানে বন্যপ্রাণী গুলোর শিকার পাওয়ার সুযোগ ছিল। এখন যেহেতু প্রাণীদের আবাসস্থল কমে গেছে তাই প্রাণীগুলো ছোট জায়গায় আটকা পড়ে গেছে। জায়গা সংকীর্ণ হয়ে আসার কারণে প্রাণীদের খাদ্যের অভাব দেখা দিচ্ছে। তাই আমি ভাবলাম যদি বনই না বাঁচে, তাহলে এই প্রাণীদের বাঁচিয়ে লাভ কী? বন সংরক্ষণ করা না গেলে তো বন্যপ্রাণীরা এমনিতেই মারা যাবে। তখন থেকেই আমি এই বন বাঁচানোর উদ্যোগ হাতে নিই।
রাসেল আরো জানান,ছোট ছোট গাছগুলো কেটে দিচ্ছি আমরা। এই ছোট উদ্ভিদ না থাকার কারণে পোকাগুলো খাদ্য পাচ্ছে না। ফলে বন্য প্রাণী কমে যাচ্ছে। কারণ খাদ্য নেই ওরা থাকবে কীভাবে? তাহলে ইকো-সিস্টেম বাঁচাতে হলে আমাদের ছোট উদ্ভিদ থেকে শুরু করে বৃহৎ বৃক্ষ পর্যন্ত সবই সংরক্ষণ করতে হবে। একটি ক্ষুদ্র জীব বিলুপ্ত হলে এর প্রভাবটা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পড়বে। বন সংরক্ষণের জন্য গত ছয় বছরে আমি ২৩ একর জায়গা নিয়েছি। যখন আমি এই জায়গা নিই তখন একটা টিলা ছাড়া বাকি সব টিলায় কিছুই ছিল না,একদম ন্যাড়া ছিল সব। এখন এখানে অনেক উদ্ভিদ জন্মেছে। ফলে প্রানীগুলোর বেঁচে থাকার জন্য যে খাবার প্রয়োজন তা এই বনে এখন আছে। আগে শজারু দেখা যেতে না এই বলে এখন শজারু ফিরে আসছে। সম্প্রতি একটা হলুদ কাছিম দেখতে পেয়েছি আমি, এবং খুব অবাক হয়েছি, ভেবেছিলাম, এটা আর নাই। এই এলাকায় আমি বন শুধু বাড়তে। যারা এখানে বসবাস করেন তাদেকে আমি বনের বড় চ্যালেঞ্জ মনে করি না। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে যারা বাইরে থেকে এসে, মোট দাগে জায়গা কিনে এবং সেগুলোকে পুরোপুরি বন ধসে দিয়ে এক জাতে গাছের বাগান করে।
স্থানীয় এক নারী বলেন, আগে বন্যশুকর, হরিণ অনেক ছিল,তাদের শিকার করে খেয়ে ফেলা হয়েছে। আমার এখন মনে হচ্ছে জিনিসটা একদমই ঠিক হয়নি। আগে প্রচুর ছিল এখনতো দিনে দিনে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এক দিনমুজুর বলেন, এখন নাতিপুতিদের একটা পাখিও শিকার করতে বারণ করি আমরা।