ভারতের টিকা এবার ব্রাজিলে

কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে ব্রাজিল। ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেতে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে ব্রাজিল।

করোনায় বিশ্বে অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ব্রাজিল। দেশটি দ্রুত করোনার টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করতে চায়। সে জন্য তারা ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেতে তোড়জোড় শুরু করেছে। এই টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর লক্ষ্যে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক চ্যানেলে যোগযোগ করছে ব্রাজিল।

ব্রাজিলিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ভ্যাকসিন ক্লিনিকস (এবিসিভিএসি) নামের সংগঠনটি জানিয়েছে, তারা ভারত বায়োটেকের কাছ থেকে ৫০ লাখ ডোজ টিকা কিনতে আগ্রহী। এ জন্য তারা ভারত বায়োটেকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে। ভারত বায়োটেকের কাছ থেকে টিকা কিনতে তারা ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকও সই করেছে।

একই সঙ্গে ব্রাজিলের প্রাইভেট হেলথ ক্লিনিকের একটি সংগঠন ভারত থেকে ভারত বায়োটেকের ‘কোভ্যাক্সিন’ টিকা কিনতে উদ্যোগী হয়েছে।

ভারত বায়োটেক হায়দরাবাদভিত্তিক একটি ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান। তারা দেশীয় পদ্ধতিতে কোভ্যাক্সিন নামের টিকা তৈরি করেছে। কোভ্যাক্সিন টিকাটি তিনটি ট্রায়াল ধাপের মধ্যে দুটি সম্পন্ন করেছে। এখন টিকাটির তৃতীয় বা চূড়ান্ত ধাপের ট্রায়াল চলছে। টিকাটির তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল গত নভেম্বরে শুরু হয়। ভারতে কোনো টিকার তৃতীয় পর্যায়ের সবচেয়ে বড় ট্রায়াল চালানোর কথা জানিয়েছে ভারত বায়োটেক।

আগামী মার্চ মাসে এই ট্রায়ালের প্রাথমিক ফলাফল পাওয়া যাবে বলে প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্য। তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। ফলে, কোভ্যাক্সিন টিকার কার্যকারিতার তথ্যের ঘাটতি থাকা অবস্থায় তা ভারতে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে।

সফলভাবে গণটিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল বিশ্বে একসময় ব্রাজিলের নাম উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হতো। কিন্তু করোনার টিকা পাওয়া ক্ষেত্রে দেশটি যে পিছিয়ে পড়েছে, তা ব্রাজিলের সরকার ও বেসরকারি খাতের এসব তৎপরতাই বলে দিচ্ছে।

গত রোববার ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা করোনার দুটি টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। টিকা দুটি হলো ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন ও সেরাম ইনস্টিটিউটে প্রস্তুতকৃত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কোভিশিল্ড’।

অনুমোদন পাওয়ার দিনই সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান আদর পুনাওয়ালা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, করোনার টিকা রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা দেবে বলে মনে করছেন তিনি।ব্রাজিলের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইতিমধ্যে ভারত থেকে ২০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আমদানির অনুমোদন দিয়েছে।

টিকা আমদানির বিষয়টি সম্পর্কে অবগত—ব্রাজিলের এমন দুজন ব্যক্তি বলেছেন, ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার চালান আসার ক্ষেত্রে তা যাতে দেশটির রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞার আওতায় না পড়ে, সেটি নিশ্চিত করতে ব্রাজিলের কূটনীতিকেরা কাজ করছেন।

টিকা আমদানির সঙ্গে যুক্ত ব্রাজিল সরকারের অর্থপুষ্ট ফিওক্রুজ ইনস্টিটিউট নিশ্চিত করেছে, দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারত সরকারের সঙ্গে এ-সংক্রান্ত আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছে।

গত ৩০ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য প্রথম অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। দেশটিতে গতকাল থেকে এই টিকার প্রয়োগ শুরু হয়েছে।অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সাধারণ রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করা যায়। এই টিকার দুটি করে ডোজ নিতে হয়। দুই ডোজের মধ্যে ব্যবধান চার সপ্তাহ।