ডিজনির নতুন রূপ
হলিউডের পুরো ব্যবসা এখন স্ট্রিমিংমুখী। গত জুলাইয়ে ইউনিভার্সাল পিকচার্স বিশ্বের সবচেয়ে বড় সিনেমা হল প্রতিষ্ঠান এএমসির সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, স্ট্রিমিংয়ে ছবি মুক্তি দেওয়ার মাত্র ১৭ দিন আগে তাদের হলে ছবি মুক্তি দেবে ইউনিভার্সাল। আবার চলতি বছরে প্যারামাউন্ট পিকচার্স তাদের বেশ কয়েকটি নতুন চলচ্চিত্র নেটফ্লিক্সের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। শূন্য হলে ছবি মুক্তি দেওয়ার চেয়ে নেটফ্লিক্সকেই লাভজনক হিসেবে বেছে নিয়েছে প্যারামাউন্ট। আর ১০ ডিসেম্বর হলিউডের সবচেয়ে বড় স্টুডিও ডিজনি ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারাও এখন থেকে স্ট্রিমিংয়েই বেশি মনোযোগ দিতে আগ্রহী।
ডিজনি সম্প্রতি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এক সভায় বলেছে, নিজেদের স্ট্রিমিং সাইট ডিজনি প্লাসে ২০২৪ সাল নাগাদ অরিজিনাল কনটেন্ট তৈরিতে বছরে ৮ থেকে ৯ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে চায় তারা। এর সঙ্গে ডিজনির মালিকানায় আছে খেলাধুলাভিত্তিক স্ট্রিমিং সাইট ইএসপিএন প্লাস। সব মিলিয়ে ২০২৪ সাল নাগাদ স্ট্রিমিংয়ে বছরে ১৪ থেকে ১৬ বিলিয়ন ডলার খরচ করার পরিকল্পনা করছে ডিজনি। অথচ ২০২০ সালে ডিজনি প্লাসে অরিজিনাল কনটেন্ট তৈরিতে মাত্র দুই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।
ওদিকে নেটফ্লিক্স চলতি বছরে কনটেন্ট তৈরিতে ১৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করার ঘোষণা দিয়েছিল। অর্থাৎ এটি স্পষ্ট যে নেটফ্লিক্সের সঙ্গে স্ট্রিমিং-যুদ্ধ এখনই শেষ করছে না ডিজনি, বরং তাতে আরও রসদ জোগানোর চেষ্টাই চলছে। ২০২৪ সাল নাগাদ স্ট্রিমিংয়ে গ্রাহক ২৩০ থেকে ২৬০ মিলিয়নে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে ডিজনি। আর নেটফ্লিক্সের বর্তমান গ্রাহকসংখ্যা ১৯৫ মিলিয়ন। সুতরাং যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই।
মহামারির কালে হলিউডে ব্লকবাস্টার ছবির খরা চলছে। ‘টেনেট’, ‘মুলান মুক্তি পেলেও আশানুরূপ ব্যবসা হয়নি। সব আশা এখন ‘ওয়ান্ডার ওম্যান ১৯৮৪’ নিয়ে। কিন্তু এই ছবির মুক্তি ঘিরেই নতুন চলের শুরু হলো হলিউডে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্নার বলছে, সামনের বছরে মোট ১৭টি ছবি বানাবে তারা। ‘ওয়ান্ডার ওম্যান’সহ এসব সিনেমা তাদের স্ট্রিমিং ওয়েবসাইট এইচবিও ম্যাক্সেও দেখা যাবে। শুধু তা-ই নয়, যেদিন ছবিগুলো সিনেমা হলে মুক্তি পাবে, সেদিনই সেগুলো স্ট্রিমিংয়ে উন্মুক্ত হবে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি হলিউডের জন্য দিনবদলের শুরু। তথ্যপ্রযুক্তির এই দুনিয়ায় নেটফ্লিক্স আসার পর থেকেই একটি আলোচনা ছিল যে একদিন হয়তো হল ও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে একই সঙ্গে ছবি মুক্তি পেতে পারে। সিনেমা, থিয়েটার-সংশ্লিষ্ট হলিউডের একটি বড় অংশ তখন তা হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু মহামারির কারণে এবার তা চাক্ষুষ করার সময় এসে গেল। ওয়ার্নার নিজেদের সিদ্ধান্তে কতটুকু অটুট থাকতে পারবে, সেই সংশয় অবশ্য রয়েছে। তবে এ ধরনের কৌশল অবলম্বনের বিষয়ে নিজেদের মধ্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়াও কিন্তু কম নয়।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান মফেটনাথানসনের বিশ্লেষক মাইকেল নাথানসন মনে করেন, ডিজনির এই বিপুল বিনিয়োগের কারণে ছোট ছোট স্ট্রিমিং প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে। কারণ, ডিজনির পরিকল্পনা মোতাবেক ২০২৪ সাল নাগাদ স্ট্রিমিং ব্যবসাই হয়ে উঠবে তাদের আয়ের মূল উৎস।