দুই সিটিতে ভোটের লড়াইয়ে থাকলেও নেই বিএনপি
রাত পোহলেই বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী এই দুই সিটিতে ভোটের লড়াইয়ে থাকলেও নেই বিএনপি। এতে করে অনেকটাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা শূন্য আরেকটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
এদিকে রোববার (১১ জুন) জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, নির্বাচনে কেউ কোনো অনিয়ম করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গাজীপুর সিটি নির্বাচনের চেয়েও বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশনের ভোট ভালো হবে বলেও জানান তিনি।
জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটির দিকে সবার নজর থাকায় সুষ্ঠু নির্বাচন করার বিষয়ে বদ্ধপরিকর ইসি। কমিশন নিজেও এই নির্বাচনকে সংসদ নির্বাচনের স্টেজ রিহার্সেল হিসেবে মনে করছে। তারা সিটির ভোট সুষ্ঠু করে আগাম পরীক্ষা দিতে চায়। এ জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
সোমবার দুই সিটির নির্বাচনের মধ্যে জনসাধারণের দৃষ্টি বেশি বরিশালের দিকে। খুলনা সিটিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেদের মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি অনেকটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। তবে, ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে রবিশাল সিটিতে।
এতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৭ জন প্রার্থী। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস, জাকের পার্টির প্রার্থী মিজানুর রহমান বাচ্চু, তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন, মো. আসাদুজ্জামান ও আলী হোসেন হাওলাদারের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে স্থানীয় ভোটাররা মনে করছেন।
তবে বরিশালে মেয়র পদে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকলেও ক্ষমতাসীনদের ‘দ্বন্দ্বের’ মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীকেই বেশি প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
এবার বরিশাল ও খুলনা সিটি নির্বাচনের প্রচারে কোনো বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর মেলেনি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যেও ছিল না তেমন পাল্টাপাল্টি অভিযোগ।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কোনো বহিরাগত নগরীতে থাকতে পারবেন না। একমাত্র চিকিৎসার জন্য আসা লোকজনকে বিশেষ বিবেচনায় দেখা হবে। অন্য কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান ভূঁঞা বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনী এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্নের লক্ষে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
সোমবার (১২ জুন) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে দক্ষিণের এই দুই নগরে। সবকেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হবে এবং থাকবে সিসি ক্যামেরার নজরদারি। নির্বাচন কমিশনও কেন্দ্রীয়ভাবে তা পর্যবেক্ষণ করবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, নির্বাচনি সামগ্রী নিয়ে ইতোমধ্যে নির্বাচনি কর্মকর্তারা ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করছেন। পাশাপাশি ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ করতে বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাঠে নামানো হয়েছে। মাঠে আরও রয়েছেন নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরাও।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইসির হাতে সব চেয়ে বড় ভোট গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এরইমধ্যে গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার দ্বিতীয় দফায় খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভোট হচ্ছে। শেষ দফায় আগামী ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটির ভোট হবে।
ইতোমধ্যে বিএনপি ভোটে না থাকলেও তাদের প্রার্থীদের অনেকে স্বতন্ত্র হয়ে লড়ছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। অবশ্য বিএনপি বলেছে, এ ধরনের কোনো কৌশলে নেই তারা।
সংসদ নির্বাচনের ৬ মাস আগে অনুষ্ঠেয় সিটি করপোরেশনের এই ভোটকে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও দেশবাসী গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। এমনকি আন্তর্জাতিক বিশ্বও এই ভোটের দিকে তাকিয়ে রয়েছে বলে দাবি করেছে খোদ নির্বাচন কমিশন।