করোনার চেয়ে তামাকে বেশি মৃত্যু
শনিবার (২৭ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ইউনাইটেড ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণে এখন পর্যন্ত ৩০ হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। যা করোনায় মৃত্যুর চেয়েও ৫ গুণ বেশি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, একদিনেই তামাক ব্যবহারের চূড়ান্ত পরিণতিতে প্রাণ হারাচ্ছেন ৪৫০ জন। এ অবস্থায় আগামী সংসদ অধিবেশনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাসের দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বক্তারা বলেন, তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারে দেশে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশই অসংক্রামক রোগের কারণে ঘটছে; যার কারণ মূলত ধূমপান ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল (রিজভী) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার (ক্লিনিক্যাল রিসার্চ) ডা. শেখ মোহাম্মদ মাহবুবুস সোবহান।
তিনি জানান, দেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। আর তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
এ সময় জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডা. মু. আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, তামাকে শুধু যে ফুসফুসে ক্যানসার হয়, তা নয়। এছাড়াও শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে সুপারি, গুল, জর্দাসহ ধোঁয়াবিহীন যেসব তামাক রয়েছে, ব্যবহার করছে, সেগুলোর কারণে জিহ্বা, ঠুঁটের ক্যানসার হয়।
অনুষ্ঠানে ইউনাইটেড ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশসহ বিভিন্ন তামাক বিরোধী সংগঠন ও ১৫ হাজারের বেশি ব্যক্তি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) যুগোপযোগী করে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে ছয়টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে।
১. আইনের ধারা ৪ ও ৭ বিলুপ্ত করা, অর্থাৎ সকল পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করা।
২. তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা।
৩. তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।
৪. তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।
৫. ই-সিগারেটসহ সকল ইমার্জিং ট্যোবাকো প্রোডাক্টস পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।
৬. বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।