রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ বন্ধ রাখতে হবে

১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান দেয় ইউনেসকো। সরকারের অনুরোধে রিয়েকটিভ মনিটরিং মিশন সুন্দরবন ঘুরে, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ও নানা নথি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। সরকার এর ওপর বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামতসহ জবাব দেয়। এরপর ইউনেসকো সেটি মূল্যায়ন করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে।

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের পাশে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ বন্ধ রাখতে হবে। সেখানে আর কোনো ভারী শিল্পকারখানার অনুমোদন দেওয়া যাবে না। ইতিমধ্যে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানাগুলোর প্রভাব মূল্যায়ন করতে একটি সমীক্ষা (এসইএ) করতে হবে। এরপর সেখানে কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে ও কোন ধরনের স্থাপনা করা যাবে না, সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।আগামী ১৬ জুলাই চীনে অনুষ্ঠেয় ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভায় এই প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হবে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ বন্ধের জন্যও তারা বলেছিল। এসব তথ্য উল্লেখ করে এই প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, তাদের বিশেষজ্ঞ কমিটি ২০১৯ সালে যখন বাংলাদেশে আসে, তখন এই দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ চলছে। সুন্দরবনের জন্য নতুন উদ্বেগ হিসেবে বরিশালে আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।

প্রতিবেদনে মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণ এবং সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে জাহাজসহ ভারী নৌযান চলাচল সীমিত করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বনের ভেতর দিয়ে জাহাজ চলাচল বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে সেখানে শব্দ ও নদীদূষণ বেড়ে গেছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ওই এলাকায় স্থাপিত ভারী শিল্পকারখানাগুলো চালু হলে নৌযান চলাচল আরও বেড়ে গিয়ে দূষণও বাড়বে।

ইউনেসকো থেকে বিশ্ব ঐতিহ্য রক্ষায় শর্ত হিসেবে রামপালসহ সুন্দরবনের পাশে স্থাপিত শিল্পকারখানাগুলোর প্রভাব তদারকির জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই কমিটির বেশির ভাগ সদস্য সরকারের বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

জানতে চাইলে সরকারের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা ইউনেসকোর শর্ত পালনে অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি। আর আমরা যাঁদের বিশেষজ্ঞ কমিটিতে রেখেছি, তাঁদের নিরপেক্ষ না বলা গেলে ইউনেসকো ঠিক করে দিক কারা নিরপেক্ষ।’সরকারি সংস্থায় চাকরি করলেও বিশেষজ্ঞরা নিরপেক্ষ থাকতে পারে বলে তাঁর ভাষ্য।

ইউনেসকোর প্রতিবেদনটি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘ইউনেসকো থেকে সুন্দরবনের ঝুঁকি সম্পর্কে যেসব কথা বলা হয়েছে, তার সঙ্গে আমি একমত। আর এসব ক্ষতির কথা আমরাও অনেক দিন ধরে বলে আসছি।