সাগরে ভেসে বেঁচে থাকার গল্প
মো. নজরুল ইসলাম। পেশায় ট্রলার মাঝি। নজির মাঝি নামেই চেনে সবাই। তার বয়স ৬৪ বছর। এখন আর নিয়মিত সমুদ্রে যান না। বদলি মাঝি হিসেবে মাঝে মধ্যে ট্রলারের হাল ধরেন।
সমুদ্রে মাছ শিকার করা অবস্থায় ৮ দিনের মাথায় ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়। ভাসতে ভাসতে গভীর সমুদ্রে চলে যায় ট্রলারটি। জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন সবাই। অবশেষে ৩২ দিন পর নৌবাহিনীর সাহায্যে বেঁচে ফিরে আসেন তীরে।
তিনি বলেন, ‘৮ দিনে প্রায় দুই লাখ টাকার মাছ ধরছিলাম। মাছ ধরা অবস্থায় গত ১৭ ডিসেম্বর হঠাৎ ট্রলার ইঞ্জিন নষ্ট হয়। এরপর শত চেষ্টা করেও আর ইঞ্জিন ঠিক করা সম্ভব হয়নি। সাগরে ভাসতে ছিলাম। ট্রলার ভাসতে ভাসতে গভীর সমুদ্রের দিকে যাচ্ছে। গেরাপি মেরে ট্রলার থামানো যাচ্ছে না। ট্রলারের বাজার সদায়, জ্বালানি শেষ হয়ে গেছে। সমুদ্রের পানিও লবণ। তাই খাবার পানির জন্য ট্রলারে থাকা বরফ পানির ১২টি ড্রামে ভর্তি করি। তাতে ৪ ড্রাম পানি হয়েছে। বরফ গলা পানি পান করছি আমরা। শিকার করা মাছ আগুনে পুড়ে খাইছি। যখন জ্বালানি শেষ হয়ে গেছে তখন মাছ কেটে রোদে শুকিয়ে শুকনা মাছ খেয়েছি। এভাবেই দিন-রাত কেটেছে।’
তিনি বলেন, ট্রলার আস্তে আস্তে গভীর সমুদ্রে আড়াইশ বাম পানিতে চলে যায়। আমরা সবাই বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছি। কারণ এত গভীর সমুদ্রে কোনো ট্রলার বা জাহাজ আসার কথা না। হঠাৎ ২৭ দিনের মাথায় দূর থেকে একটি জাহাজ দেখতে পাই। কিন্তু জাহাজ আমাদের দেখেনি। অন্যত্র চলে গেছে। ঠিক এর পরদিন একটি জাহাজ আমাদের ট্রলার দেখে কাছে আসে এবং আমাদের খাবার দেয়।
তারপর অন্য একটি জাহাজে খবর দিয়ে আমাদের ২০ ঘণ্টা টেনে সেন্টমার্টিনে নিয়ে যায়। সেখানে আমাদের সকলের চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করেন। পরের দিন আসরের পর অন্য একটি ট্রলারে বেঁধে সেন্টমার্টিন থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেয়।
এদিকে গত শনিবার (৯ জানুয়ারি) আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) সেন্টমার্টিন থেকে ৮৩ নটিক্যাল মাইল দূরে বঙ্গোপসাগরে ভাসমান অবস্থায় ট্রলারটি উদ্ধার করা হয়। নৌবাহিনীর জাহাজ নির্মূল ও অতন্দ্র গভীর সাগরে ভাসমান অবস্থায় জেলেসহ ট্রলারটি উদ্ধার করে। তীব্র পানি ও খাদ্য সংকটে শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল অবস্থায় জেলেদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাদ্য দেয়া হয়।
শনিবার রাতে কোস্ট গার্ড সেন্টমার্টিন স্টেশনের কর্মকর্তা লে. কমান্ডার আসিফ মোহাম্মদ আলী জানান, উদ্ধার করা জেলেদের নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
বাড়ি ফিরে আসা অন্য জেলেরা হলেন, পটুয়াখালী জেলার মহিপুর সদর ইউনিয়নের নজিবপুর গ্রামের আল-আমিন (২১), বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার ছোট বগি এলাকার শাকিল (১৪), শামিম (৩৮), তোফাজ্জেল হোসেন ফকির (৫২), রমজান তালুকদার (৫০), শাহ আলম (৪০), আ.আজিজ (৪৩), খলিল (৩৯), হোচেন (৩৮) এবং লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হাফিজুল্লাহ (৫০), কাশেম (৫০), ইউসুফ (৪২), বাবুল (৪২), আবুল কাশেম (৪২), কবির হোসেন (৪২), বাবলু (৪২) ও শ্রী জগানাত (৪৮)।