ঝুঁকিতে আছে শিশুরা

নরসিংদীর রিকশাচালক আবদুল মালেক  বলেন, ছেলে শান্তকে ঢাকায় নিয়ে এসেছিলেন পেটের চিকিৎসা করাতে। চিকিৎসা নেওয়ার পর ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরবেন, এমন সময় জ্বর এল। চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা করিয়ে দেখেন, শান্তর করোনা পজিটিভ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আট মাসের ছেলেকে নিয়ে ঠায় বসে ছিলেন মুক্তা দাশ। ছেলে প্রীতম দাশকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। ওইটুকুন ছেলের ভারী অস্বস্তি অক্সিজেন মাস্ক নিয়ে। তাই এই বসে থাকা, আর সুস্থ হওয়ার ক্ষণ গোনা।

মুক্তা দাশ  বলেন, ঠান্ডা লেগেছিল ছেলের, সেখান থেকে নিউমোনিয়া। বিক্রমপুর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পর কোভিড পরীক্ষায় ধরা পড়ে ছেলে ‘পজিটিভ’। মার্চের শেষ দিকে এসেছেন তিনি। প্রীতমের তবু ঠান্ডা লেগেছিল, একই কক্ষে চিকিৎসাধীন আট বছরের শান্ত কিংবা নয় বছরের সালামের তেমন কোনো উপসর্গ ছিল না বলে জানিয়েছেন তাদের অভিভাবকেরা।

কোভিড উপসর্গ নেই অথচ কোভিডে আক্রান্ত—এমন অনেক শিশুই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির শিশু বিভাগের প্রধান সাঈদা আনোয়ার। তিনি  বলেন, যেসব শিশু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসছে, তাদের কেউ কেউ অন্য রোগের চিকিৎসা করাতে এসে কোভিড বলে শনাক্ত হচ্ছে। কেউ জ্বর, কাশিতে ভুগে আসছে, আবার কেউ আসছে ডায়রিয়া নিয়ে, কারও রোগ মারাত্মক দুর্বলতা। বড়দের মতোই শিশুরা কিছু ওষুধপথ্য খেয়ে আর নিয়মকানুন মেনেই ভালো হচ্ছে। তবে জটিল হয়ে যাচ্ছে সেই শিশুদের ক্ষেত্রে, যাদের আগে থেকেই হৃদ্‌রোগ, কিডনিসংক্রান্ত জটিলতা কিংবা ধারাবাহিকভাবে ভোগায় এমন রোগ আছে। আবার অনেকে আসছে গায়ে ছোপছাপ দাগ, হাত-পা ফোলা নিয়ে, অর্থাৎ কাওয়াসাকি ডিজিজের মতো উপসর্গ নিয়ে। এ রোগের নাম এমআইএসসি (মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লামেটরি সিনড্রোম বলা হয়)। এটি কোভিডের পর হয় এবং শিশুদের জন্য সংকটজনক হয়ে উঠতে পারে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের উপপরিচালক প্রবীর কুমার সরকার  বলেন, “শরীরের রোগ প্রতিরোধের নিজস্ব একটা পদ্ধতি আছে। এমআইএসসিতে এই পদ্ধতি শুধু রোগজীবাণুকে ধ্বংস করে না, শরীরের সুস্থ টিস্যুগুলোকেও ধ্বংস করে ফেলে।“

চিকিৎসকেরা বলছেন, বড়দের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। যেকোনো কাজ করতে হবে পরিবারের বয়স্ক ও শিশুদের কথা মাথায় রেখে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরামর্শ হলো শিশুদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে উৎসাহ দেওয়া। ঘরের কাজে যুক্ত করা। লোকসমাগম কম হয়—মাঝেমধ্যে এমন জায়গায় খেলতে নিয়ে যাওয়া। শিশুকে সচল ও সক্রিয় রাখা এই রোগ প্রতিরোধের একটি অংশ বলে মনে করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকেরা।

শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন, রোগ প্রতিরোধে শিশুকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া ও আলো–বাতাস চলাচল করে, এমন ঘরে থাকার ব্যবস্থা করা দরকার।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই ইউনিটে গত বছরের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শূন্য থেকে ১২ বছর বয়সী ১ হাজার ৭৬০ জন রোগী এসেছে।