জাম পুষ্টিগুণে অনন্য
গ্রীষ্মের সুস্বাদু ফলগুলোর মধ্যে জাম অন্যতম। আমের নাম নিলে তার সঙ্গে সঙ্গে চলে আসে জামের নামটিও। অন্যান্য ফলের তুলনায় দেশীয় এই ফলটির স্থায়িত্বকাল বেশ কম। টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলের উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের বেশিরভাগেরই জানা নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, জাম পুষ্টিগুণে অনন্য।
হজমে সাহায্য করে
জাম খেলে তা হজমের সমস্যা মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। উচ্চ ফাইবার এবং পানি থাকার ফলে জাম হজমের উন্নতি এবং অন্ত্রের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এটি পেট ফাঁপা হওয়ার মতো সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। তবে এই ফল অম্লীয় প্রকৃতির হওয়ার কারণে কারও কারও ক্ষেত্রে পেটের সমস্যার কারণ হতে পারে।
মুখের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে
জাম খেলে তা মাড়ির রক্তক্ষরণ এবং মাড়ির প্রদাহের চিকিৎসায় সাহায্য করে। এর রস মাউথওয়াশ হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। জামের পাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা মুখের স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
ভিটামিন সি ছাড়াও জামের প্রদাহরোধী এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা আপনাকে সংক্রমণ এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করবে। এটি হাঁপানি, ফ্লু এবং এ ধরনের সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের জন্য এই ফল বেশি উপকারী।
জাম রক্ত বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে। যারা আয়রনের ঘাটতি এবং কম হিমোগ্লোবিনে ভুগছেন তাদের খাদ্যতালিকায় বেশি করে জাম যোগ করা উচিত। এর ভিটামিন সি এবং আয়রন রক্তকে বিশুদ্ধ করতে এবং টক্সিন থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। সেইসঙ্গে জাম পটাসিয়াম সমৃদ্ধ, যা রক্তচাপ পরিচালনা করতে এবং হার্টের স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সহায়তা করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
জামে ফাইবার বেশি এবং ক্যালোরি কম থাকে। এটি তৃপ্তি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে এবং এভাবে আপনার ওজন কমানোর যাত্রায় আপনাকে সাহায্য করতে পারে। এটি মুখরোচক কিন্তু স্বাস্থ্যকর যা আপনার ক্ষুধা নিবারণ করবে এবং ক্ষুধা কমিয়ে রাখবে।
ত্বকের জন্য ভালো
জামে ভিটামিন এ, বি এবং সি এর পাশাপাশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জাম খাওয়ার ফলে কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে পারে, যা ত্বককে আরও কোমল করে তোলে। তাই আপনি যদি তারুণ্যের উজ্জ্বলতা চান তবে আপনার এই ফল বেশি করে খাওয়া শুরু করা উচিত।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী
টাইপ ২ ডায়াবেটিসের কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা যেমন বারবার প্রস্রাব এবং গলা শুকিয়ে আসার মতো ডায়াবেটিস মোকাবিলা করতে সাহায্য করে জাম। এই ফলে কম গ্লাইসেমিক সূচক ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হিসেবে বিবেচিত হয়।
মৌসুমি এ ফলটির বিচিও কিন্তু কোনো অংশে কম নয়। ওজন কমাতে সাহায্য করে জামের বিচচূর্ণ। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেলে কিছু দিনের মধ্যেই আপনার ওজনে পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন।
জামের বিচচূর্ণ করার পদ্ধতি জেনে নিন-
- জাম পরিষ্কার করে একটি পাত্রে রাখুন।
- আঙুল দিয়ে ফল থেকে বিচি ছাড়িয়ে নিয়ে অন্য একটি শিশিতে রেখে দিন।
- বিচিগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিন যাতে গায়ে শাঁস না লেগে থাকে।
- পরিষ্কার কাপড়ে বিচিগুলো ছড়িয়ে রোদে তিন চার দিন শুকাতে দিন।
- শুকিয়ে গেলে বাইরের খোসা ছাড়িয়ে ভেতরের সবুজ অংশ বের করুন।
- সবুজ অংশটি সহজেই আঙুলের চাপে ভাঙতে পারবেন। সবগুলো ভেঙে আরও কিছুদিন রোদে শুকাতে দিন।
- এবার শুকনো বিচিগুলো ভালো করে গুঁড়া করে নিন।
- ভালো করে গুঁড়া করার পর চালুনিতে চেলে নিন।
- তারপর জামের বিচির গুঁড়া একটি বায়ু-নিরোধক শিশিতে রেখে দিন এবং প্রয়োজন মতো ব্যবহার করুন।
সবসময় দেশি ও মৌসুমি ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন। মৌসুমি ফলের পুষ্টি শরীরের জন্য অনেক উপকারী। নানা রঙের ফল আমাদের নানা রকম পুষ্টির জোগান দেয়। তাই সুস্থ থাকতে ফলের কোনো বিকল্প নেই।