মোদির পতনের আভাস
ভারতজুড়ে একদিকে উচ্ছ্বাস অন্যদিকে উৎকণ্ঠার চিত্র। রাস্তাঘাটে আলোচনার ঝড়, মোদি থাকবেন না রাহুল তাকে গ্রাস করবেন। চুলচেরা বিশ্লেষণে বিরোধীরা যেন কংগ্রেসের মধ্যেই আশার আলো দেখছে।
সম্প্রতি কর্ণাটকে ভরাডুবির মধ্য দিয়ে বিজেপি’র শাসনের অবসান হয় দক্ষিণ ভারতে। আর নিরঙ্কুশ জয়ের মাধ্যমে যেন রাজনীতিতে আগুনের গোলা হয়ে বেরিয়ে আসে দীর্ঘদিন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে থাকা কংগ্রেস। এই জয়কে তাই বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলো দিল্লীর মসনদে বসার আলোক বর্তিকা হিসেবেই দেখতে শুরু করেছে। কারণ ২০২৪ সালেই জাতীয় নির্বাচন।
তবে ভুলে গেলে চলবে না বিজেপি শুধু কেন্দ্রেই নয় ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে ৯টি রাজ্যে এককভাবে এবং ৫টিতে এনডিএ নেতৃত্বাধীন জোটের মাধ্যমে রাজত্ব করছে। বিরোধীদের বিজেপিকে অস্তগামী সূর্য হিসেবে ভাবতে শুরু করার যুক্তিটা তাহলে কোথায় ?
কিন্তু চার বছরের মাথায় এসে যেন পাল্টে যেতে শুরু করেছে দেশটির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। বদলে যেতে শুরু করেছে আগের সব হিসেব-নিকেশ। কর্ণাটকের পর রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও তেলেঙ্গানার বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপিকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। কিন্তু কেন?
আরও যে বিষয়টিকে বিশ্লেষকরা কর্ণাটকে মোদির দলের ভরাডুবির জন্য দায়ী করছেন সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে। যার স্পষ্ট ইঙ্গিত, ভোটবাক্স থেকে সংখ্যালঘু ভোটারদের জনসমর্থন দিনদিন কমে যাওয়া। সে সাথে প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণের সঙ্গে বিজেপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের দূরত্ব বেড়ে যায়।
এই যখন অবস্থা তখন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে ভারতের সর্বস্তরের বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলো সংঘবদ্ধ হতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে পাঞ্জাব ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কলকাতায় বৈঠকও করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। যেখানে আলোচনা হয় বিজেপি বিরোধী একটি বৃহত্তর জোট গঠনের ইস্যু।
এর মধ্যেই কর্ণাটকের বিধানসভা নির্বাচনে জেতার পর এখন কংগ্রেসের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের বিধায়কদের ধরে রাখা। বিজেপি টোপ দিয়ে তাদের ভাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে পারে, এমন আশঙ্কায় রাজ্যটিতে বিজয়ী বিধায়কদের একত্রে অন্য কোনো রাজ্যে রাখার কথাও ভাবা হচ্ছে বলে দলের পক্ষ থেকে আভাস পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে অতীত ইতিহাস সুখকর নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, কর্ণাটকে কংগ্রেসের ঐতিহাসিক বিজয় নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ হলেও, একে এখনই ‘পদ্মফুল ম্লান’ হয়ে পড়ার আলামত মনে করলে তা হবে বড় ভুল। দক্ষিণের কর্ণাটকের ফলাফল উত্তর বা উত্তর-পূর্ব ভারতের ভোটারদের কীভাবে নাড়া দেয় বা আদৌ নাড়া দেবে কিনা সেটি এ মুহূর্তে অনুমান করা কঠিন। নানা অঞ্চলে, জাতিধর্ম নির্বিশেষে বিভক্ত ভোটের রাজনীতি জটিল সমীকরণে বন্দি।
কারণ দেশ হিসেবে ভারত যেমন বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ তেমনি ভারতের ভোটের রাজনীতির গতি-প্রকৃতিও বিচিত্র। তাই আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনে কার পালে কতটুকু হাওয়া লাগবে তার আলামত স্পষ্ট হতে আরও কয়েক মাস থাকতে হবে অপেক্ষায়।