পবিত্র হজে ডায়াবেটিস রোগী
হজ মুসলিম ধর্মালম্বীদের জন্য গুরত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশ থেকেও প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ হজে অংশ নেয়। এর মধ্যে অনেকেই থাকেন ডায়াবেটিস রোগী। প্রাকৃতিকভাবেই সৌদি আরবের আবহাওয়া আমাদের দেশের তুলনায় ভিন্ন। তাই হুট করেই সেখানকার আবহাওয়ার সঙ্গে তাৎক্ষনিকভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন না আমাদের অনেক হাজি। এরমধ্যে আবার ডায়াবেটিসে যারা ভুগছেন তাদের জন্য জটিলতাটা আরও একটু বেশি।
হজ যাত্রায় ডায়াবেটিস রোগীরা কীভাবে নিজ স্বাস্থ্যের যত্ন নেবেন সেটাই লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হরমোন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম।
হাজিদের প্রায় ১৫ শতাংশ ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথিতে ভোগেন; যা পায়ের নানা জটিলতা যেমন ক্ষত, ঘা বা গ্যাংগ্রিন হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের আলসার হাজিদের চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি এবং অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের দরকার হতে পারে।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া, দুর্বল ক্ষত নিরাময় এবং নিউরোপ্যাথি ও পেরিফেরাল ভাসকুলার রোগের উপস্থিতির কারণে ডায়াবেটিস রোগীরা গুরুতর জটিলতার সম্মুখীন হন।
গ্রীষ্মের মাসগুলোতে মাটির উচ্চ তাপমাত্রার (প্রায় ৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) কারণে পা পুড়ে যাওয়াও একটি উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি, যা পরে পায়ের আলসারের কারণ হয়।
পায়ের সমস্যাগুলো সমাধন
- দৈনিক পা পরিষ্কার করা আবশ্যক এবং গরম পানিতে পা ডোবানো অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।
- হাঁটার সময় ফাটল রোধ করতে রোগীকে প্রতিদিন দুবার ব্যবহার করার জন্য একটি ভালো মানের গন্ধবিহীন ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত।
- মসজিদের মধ্যে জুতা নিষিদ্ধ এলাকায় প্যাডেড মোজা ব্যবহার করা আবশ্যক; খালি পায়ে হাঁটা উচিত নয়।
- হজ পালনকালে হাঁটার জন্য হালকা ওজনের, পায়ের গোড়ালি রক্ষা করে এবং বলের প্যাডিংসহ নরম প্যাডেড জুতা পছন্দ করা উচিত। জুতা যেন বেশি টাইট না হয়।
- হজ পালনকালে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১৫ কিলোমিটারের দূরত্ব হলে, মোটরচালিত যান বা হুইলচেয়ার ব্যবহার করা নিরাপদ।
- রোগীদের পা শুকনো রাখা উচিত এবং ওজু করার পর সুতির তোয়ালে দিয়ে মুছে নিতে হবে।
- প্রদাহ ও সংক্রমণের লক্ষণ বিষয়ে এবং সন্দেহজনক ক্ষেত্রে অপরিবর্তনীয় টিস্যুর ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে যথাসময়ে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করা বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- পায়ের কোথাও ফোসকা দেখা দিলে, পা শুষ্ক রাখা উচিত এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য যথাযথ পা স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। সংক্রমিত ফোসকা দেখা দিলে অবিলম্বে সাহায্য নিন।
পরিশেষে, সুস্থ ও নিরাপদ হোক ডায়াবেটিস রোগীর পবিত্র হজ পালন।