এই গরমের ফ্যাশন

চলছে গ্রীষ্মকাল। প্রকৃতিতে এখন গরমের দাপট। বাইরে বেরোলেই প্রচণ্ড তাপদাহ। প্রতিদিনই তাপমাত্রা বাড়ছে। অল্প ক্ষণেই ঘেমে-নেয়ে একাকার অবস্থা। পোশাক ভিজে বিশ্রী পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে যখন তখন। তাই এ সময় পোশাকের ব্যাপারে প্রয়োজন বাড়তি সচেতনতা। একটু ভেবে-চিন্তে পোশাক পরতে হবে। এমন দিনে তাই মোটা কাপড় পরার প্রশ্নই আসে না। এ নিয়ে ফ্যাশন সচেতনরা বেশ চিন্তিত। তাদেরকেই বলছি- নো টেনশন, ডো ফুর্তি!

গ্রীষ্মকালের জন্য মানানসই ফ্যাশনের কিছু ট্রেন্ড চালু আছে বিশ্বজুড়ে। এই কথাগুলো প্রখর তাপযুক্ত যেকোন স্থানে ফ্যাশনের মন্ত্র, তা কেউ মানুক বা না মানুক। এই গরমে পোশাক নির্বাচনে যেসব বিষয় মাথায় রাখা জরুরী –

আঁটসাঁট জামাকাপড় তুলে রাখুন অপেক্ষাকৃত শীতল সময়ের জন্য। ঢোলা পোশাকে শান্তি খুঁজে নিন।বাইরের দেশের নারীরা যেখানে অনায়াসে ঢোলা জামাকাপড়ে স্মার্টনেস দেখাচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশে বেশ অদ্ভুত এক ধারণা প্রচলিত আছে যে কেউ ঢোলা পোশাক পরা মানে তার ড্রেসিং সেন্স বাজে হওয়া। সবসময় বা সবকিছুতে নয় অবশ্যই, কিন্তু গরমের এই হাঁসফাঁস সময়ে খানিকটা ঢোলা পোশাকেই আপনাকে স্মার্ট এবং ট্রেন্ডি দেখাবে। আরামেও থাকবেন। মেনে চলুন কথাটা। গ্রীষ্মের কামিজ বা কুর্তিগুলো খুব চাপানো না হোক, হোক ঢিলেঢালা কিন্তু দারুণ স্টাইলিশ।নানা রকম কাটের ফতুয়া, ম্যাক্সি টাইপ কুর্তি সাথে প্যান্ট, ফুলেল নকশার সুতির নরম কামিজে কেবল এই গরমে স্বস্তিই মিলবে না, ফ্যাশন রক্ষাও হবে পুরোদমে।

ঢিলেঢালা পোশাকের কথা তো হলো, হালকা কাজের পোশাক পরার পরামর্শ সেই সাথে যোগ করে নিন। বেশি কাজের ভারী নকশাদার পোশাক গরমের উপযোগী নয় মোটেও। কাপড় গায়ে চড়ানোর পরে যদি কাজগুলো গায়ে বিঁধতে থাকে যা চামড়ায় অস্বস্তির সৃষ্টি করবে, তেমন কাপড়ে কেবল ফ্যাশন খুঁজে কী লাভ? তাই গরমের দিনে পোশাক হবে যতোটা সম্ভব হালকা নকশা করা।

গলার কাছে খোলা থাকা পোশাক গরমে অধিক গ্রহণযোগ্য। এটি দেহে বাতাস চলাচলের সুবিধা বজায় রাখে এবং ঘাম কম জমতে সাহায্য করে। গলা ও ঘাড়ে ঘামাচি হবার সম্ভবনা কম থাকে। তাই বন্ধ গলার চেয়ে খোলা গলার কাপড়েই গরমকাল কাটানোর চিন্তা রাখুন।

কৃত্রিম তন্তু পরিহার করে গরমের সময়টায় কিছু প্রাকৃতিক তন্তুর পোশাক রাখুন নিত্য ব্যবহারের তালিকায়। খাঁটি সুতি এই গরমের খাঁটি বন্ধু, কোন সন্দেহ নেই তাতে। লিনেন বা সিল্ক বাদ রাখুন এখনের জন্য।

খুব ঝামেলা না পোহাতে হলে প্রতি দুইবার ব্যবহারের পরেই কাপড় ধোয়ার অভ্যাস করুন। হাইজিনের ব্যাপার তো রয়েছেই, গরমে অতিরিক্ত ঘাম থেকে কাপড়ে আসা দুর্গন্ধ ঠেকাতেও নিয়মিত কাপড় ধোয়া জরুরী। খুব ভালো মতন তৈরি হয়ে বের হলেন, সুগন্ধীও মেখেছেন কিন্তু পরনের পোশাকটি থেকে বাজে গন্ধ আসছে, আপনার পুরো আয়োজন মাটি করতে এর চেয়ে বেশি কী আর লাগবে ভাবুন! কাজেই না ধুয়ে এক পোশাক বহুবার পরার অভ্যাসটি অন্তত গরমকালের জন্য বাদ দিন।

পোশাকের সাথে মানিয়ে যায় তেমন সামারটাইম হ্যাট এই সময়ের সঙ্গী হতেই পারে। কুর্তি, শার্ট, ম্যাক্সি বা স্কার্টের সাথে তো চমৎকার মানিয়ে যায় এসব হ্যাট। কখনো বা একটি স্কার্ফ চুলে আলগোছে বাঁধা, দরকারে যা রোদ থেকে মাথা বাঁচাবে। গ্রীষ্মকালের দুইটি দারুণ অনুষঙ্গ। সাজপোশাকেও ভিন্নমাত্রা নিয়ে আসতে এমন হ্যাট বা স্কার্ফের এমন একটি স্টাইল বেশ কার্যকরী। দরকার মতন ব্যবহার করুন যেকোনটি।

পিঠে বিশাল এক ব্যাকপ্যাক নিয়ে বের হওয়া বাদ দিন। ব্যাগ হিসেবে ব্যাকপ্যাক বেশ স্টাইলিশ এবং যেকোন প্রয়োজনে আপনি এটিকে ব্যবহার করতে পারেন, খুব ছোট আকৃতির ব্যাকপ্যাকও সহজলভ্য তাই অল্প জিনিষপত্র বহন করতেও এই ব্যাগ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু গরমের সময় পুরো পিঠজুড়ে একটি থলের বসে থাকাটা আপনাকে যথেষ্ট অস্বস্তি দেবে। তাই বেশি জিনিষপত্র বহন না করার থাকলে ভিন্ন রকম ব্যাগ বেছে নিন এই সময়। স্টাইলিশ সাইড ব্যাগগুলো গ্রীষ্মকালের জন্য ভালো পছন্দ হতে পারে।

তাছাড়াও গরমে ছেলেদের পোশাক নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ ডিজাইনাররা, গরমে ছেলেদের জন্য হাফশার্ট বা ক্যাজ্যুয়াল শার্ট, টি-শার্ট কিংবা পলো টি-শার্ট আরামদায়ক হবে। বিশেষ করে টি-শার্ট যেমন ফ্যাশনেবল তেমনি আরামদায়ক। বাজারে গোলগলা ও কলার দুই ধরনের টি-শার্টই পাওয়া যাচ্ছে। এসব টি-শার্টে নানা রঙ ও নকশায় ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে প্রিয় ব্যক্তিত্বের ছবি, নানা রকম উক্তি, লোগো, রিকশা পেইন্ট, বর্ণমালা। এছাড়া ফতুয়া গলার টি-শার্টও পাওয়া যাচ্ছে এখন। ফ্যাশনে এখন দারুণ জনপ্রিয় পলো টি-শার্টও। গরমে চেক শার্টের পাশাপাশি প্রিন্টের শার্ট এখন বেশ জনপ্রিয়। ফ্লোরাল মোটিফের হাফশার্ট সবার পছন্দ।

গরমে মেয়েদের পোশাক নিয়ে এই ফ্যাশন ডিজাইনাররা বলেন, গরমে মেয়েরা চাইলে টি-শার্ট, টপস, ফতুয়া, ম্যাক্সি টাইপ পোশাক পরতে পারেন। তবে, গরমে সবচেয়ে আরামদায়ক পোশাক হলো টি-শার্ট। দেশে এখন অনেক ব্র্যান্ডের দোকানে টি-শার্ট পাওয়া যায়। এসব টি-শার্টে নানা ধরনের ডিজাইন। এছাড়া, টি-শার্ট কোনো বয়সেই অনায়াসে পরা যায়। গরমের দিনে মেয়েরা চাইলে কুর্তিও বেছে নিতে পারেন। বাজারে সুতি কাপড়ের কুর্তি পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো একদিকে যেমন দেশিয় ঐতিহ্য প্রকাশ করে তেমনি অনেক ফ্যাশনেবলও। আবার মেয়েরা চাইলে এসময় টপস বেছে নিতে পারেন। এছাড়া ফতুয়া হতে পারে গরমের সময়ের পছন্দের পোশাক। প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততার মাঝে ফতুয়া হতে পারে আরামদায়ক পোশাক। হালকা কাজ, আরামদায়ক কাপড় ও দাম হাতের নাগালে থাকায় ফ্যাশন সচেতন নারীদের প্রতিদিনের পোশাকের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ফতুয়া। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে নানান ডিজাইনের ফতুয়া পাওয়া যাচ্ছে।

আরও বলেন, গরমে দিনের বেলায় হালকা রঙ এবং রাতে গাঢ় রঙের ম্যাক্সি ড্রেস বা লং ড্রেস পরা যেতে পারে। বর্তমানে বাজারে নানা প্যাটার্নের ম্যাক্সি ড্রেস পাওয়া যাচ্ছে। টাইডাই, শিবোরি, প্যাচওয়ার্ক ও মার্বেল ডাই করা হয়েছে এতে। এই ধরনের পোশাকের প্যাটার্নের জন্য লিনেন, জর্জেট ও নেটের কাপড় সবচেয়ে উপযোগী। কয়েক ধরনের কাপড় একসঙ্গে ব্যবহার করেও নকশায় বৈচিত্র্য আনা হচ্ছে এখন।

এই গরমে তবে থাকুন সর্বোচ্চ স্বস্তিতে, সাথে থাকুক ফ্যাশনও পুরোদমে! হ্যাপি সামার!