পুষ্টিগুণে ভরা লিচু
বাবুদের তাল-পুকুরে
হাবুদের ডাল-কুকুরে
সে কি বাস করলে তাড়া,
বলি থাম একটু দাড়া।
পুকুরের ঐ কাছে না
লিচুর এক গাছ আছে না
হোথা না আস্তে গিয়ে
য়্যাব্বড় কাস্তে নিয়ে
গাছে গো যেই চড়েছি
ছোট এক ডাল ধরেছি,
ছোট-বড় সবাই কাজী নজরুল ইসলাম এর লিচু চোর কবিতা পড়েছি, লিচুর কথা বললেই, এই কবিতার কথাই সবার আগে মনে হয় আমাদের।
ষড়ঋতুর এ দেশে বিভিন্ন ঋতুতে পাওয়া যায় নানা পুষ্টিকর মৌসুমি ফল। যেগুলো মানুষের শরীরের পুষ্টিচাহিদা পূরণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমনই একটি ফল লিচু। তবে ইতিহাস ঘাঁটলে লিচুর আদিনিবাস পাওয়া যায় চীন, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়াতে। চীনে আনুমানিক ২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পুরোনো ফল বলে উল্লেখ করা হয় লিচুকে। লিচুর রয়েছে নানা জাত। তবে পুষ্টিগুণ আর কার্যকারিতার দিক থেকে লিচুর রয়েছে লম্বা তালিকা।
লিচুতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ফ্ল্যাভনয়েড, ফাইবার এবং প্রোটিন। এছাড়া আরও আছে ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেড, ফ্যাট এবং প্রচুর মিনারেল। অন্যদিকে লিচুতে আরও আছে ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রন। যাদের হৃদরোগের ঝুঁকি আছে তাদের ক্ষেত্রে শরীরের কপার কিংবা তামার পরিমাণ বাড়াতে লিচু বেশ কার্যকর। এছাড়া ক্যানসার কিংবা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতেও মৌসুমি এ ফলটি খুবই উপকারী। এর বাইরে এতে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট থাকে খুব অল্প পরিমাণে। ফ্যাট না থাকয় সবার জন্য উপকারি একটি ফল। পাশপাশি এতে ক্যালরিও কম, তাই সবার জন্যে উপযুক্ত।
তবে লিচুতে শর্করার মাত্রা অনেকটাই বেশি। তাই অনেকের চিন্তা থাকে, ডায়াবেটিস রোগীরা লিচু খেলে কোনও ক্ষতি হতে পারে কি না, তা নিয়ে।
এমনিতেই ডায়াবেটিস রোগীদের সব ধরনের মিষ্টি খাবার অর্থাৎ যেসব খাবারে উচ্চ পরিমাণে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকে সেগুলো থেকে দূরে থাকতে বলা হয়। মিষ্টি ফল লিচুতেও উচ্চ পরিমাণে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স আছে। তবে অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, লিচু অন্যান্য মিষ্টি ফলের চেয়ে আলাদা নয়। এতেও অন্যান্য ফলের মতো প্রাকৃতিক সুগার রয়েছে। কিন্তু এই ফলে যে ধরনের শর্করা পাওয়া যায় তা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ। এছাড়া যদি কারও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত থাকে লিচু খাওয়া তার জন্য ক্ষতিকর নয়।
এ বিষয়ে ব্যাপারে ভারতের দিল্লির নিউট্রিফাই বাই পুনম ডায়েট অ্যান্ড ওয়েলনেস ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাতা বলছেন, ডায়াবেটিস রোগীরা পরিমিত পরিমাণে লিচু খেতে পারেন। কিন্তু, লিচুতে প্রচুর পরিমাণে সুগার রয়েছে৷ তাই এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে রক্তে অনিয়ন্ত্রিতভাবে শর্করা বাড়তে পারে।
ডায়েটিশিয়ানদের মতে, যে সব রোগীদের রক্তে শর্করা দ্রুত ওঠানামা করে তাদের লিচু খাওয়ার আগে ডাক্তার বা ডায়েটিশিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। তিনি বলেন, অতিরিক্ত শর্করার রোগীদের লিচু খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় না। তাদের কম গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত ফল খাওয়া উচিত।
ডায়েটিশিয়ানরা জানান, ডায়াবেটিস রোগীরা অল্প পরিমাণে লিচুর রসও পান করতে পারেন।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও বেশ কার্যকর। এ ফলটি আপনার শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়ায় ধীরে ধীরে। যাতে করে ক্ষতিকারক জীবাণু বাসা বাঁধতে না পারে শরীরে। এর আঁশ হজমের ক্রিয়া সচল রাখতে সহায়তা করে পাশাপাশি গ্যাস্ট্রিক এবং পরিপাকতন্ত্রের জন্যও বেশ কার্যকর।
যাদের উচ্চরক্তচাপ এবং ত্বকে ব্রণের সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে লিচু এক উপকারী ফল। লিচুতে থাকা ভিটামিন সি এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবেও কাজ করে। এর বাইরে যারা ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা নিশ্চিন্তে খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন গ্রীষ্মের এ মিষ্টি ফলটি।