ইন্টারনেটের আদিঅন্ত

আমরা হয়ত ২-১ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে পারি, ৪-৫ ঘণ্টা টিভি না দেখেও থাকতে পারি কিন্তু ইন্টারনেট ছাড়া আমরা এক মুহূর্তও থাকতে পারি না। তবে দুঃখের বিষয় হল যে, আমরা অনেকেই আমাদের সকল মুহূর্তের সঙ্গী ইন্টারনেট সম্পর্কে বেশি কিছু জানি না। তাই চলুন আজ দুঃখটাকে মেরে ফেলে জেনে নেই ইন্টারনেট কি এবং আদিঅন্ত তথা এর আসল রুপ।

ইন্টারনেট কি?

ইন্টারনেট কি সেটা সহজ ভাষায় বললে, আন্তর্জাল বা ইন্টারনেট হল এমন একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক যেটা পুরো পৃথিবীর সকল কম্পিউটারকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত করে। তবে আরেকটু বিস্তারিতভাবে বললে- কিছু কম্পিউটার একে অপরের সাথে সংযুক্ত থেকে একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরী করে। এভাবে পৃথিবীর অধিকাংশ কম্পিউটার একে অপরের সাথে সংযুক্ত থেকে যে কম্পিউটার নেটওয়ার্কগুলো তৈরি করেছে, সেগুলোর সমষ্টিকেই আমরা ইন্টারনেট বলি। আর আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকল নামের এক প্রামাণ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে কম্পিউটারগুলো একে অপরের সাথে ডেটা আদান-প্রদান করে থাকে।

অর্থাৎ আমাদের বাসায় থাকা কম্পিউটার বা মোবাইল ডিভাইসটি যদি এই কম্পিউটার নেটওয়ার্কের(ইন্টারনেট) সাথে কানেক্ট থাকে, তাহলে আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকলের মাধ্যমে নেটওয়ার্কে সংযুক্ত থাকা অন্য কম্পিউটারের সাথে আমরা ডেটা আদান-প্রদান করতে পারব। আশা করি ইন্টারনেট কি সেটার মোটামুটি একটা ধারনা পেয়েছেন।

ইন্টারনেট – এর ইতিহাস

ইন্টারনেট – এর প্রথম ধারনা আসে ১৯৫০ সালে যখন কম্পিউটার বিজ্ঞান অধ্যাপক লিওনার্ড ক্রাইনরক তার গবেষণাগার – ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস(ইউসিএলএ) থেকে অর্পানেটের মাধ্যমে একটি বার্তা স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআরআই) – তে পাঠান। ক্রাইনরকের পাঠান এই বার্তাটি ছিল ইন্টারনেটের প্রথম কোন তথ্য।

তখনকার সময়ে ইন্টারনেট সেরা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার হলেও ব্যবহারসুলভ ইন্টারনেট আসে ৭০ – এর দশকে। এই পুরদস্ত ইন্টারনেট আসার জন্য সবচেয়ে বড় অবদান রাখে আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকল। এই আইপি – এর সাহায্যে লক্ষাধিক অর্পানেটের মত কম্পিউটার নেটওয়ার্ক একসাথে জুড়ে দেওয়া সহজ হয়ে গেল এবং এভাবে এর পরিধি বাড়তে লাগল। এই আন্তঃসংযোগের নাম দেয়া হল ইন্টারনেটওয়ার্ক সংক্ষেপে ইন্টারনেট। আশির দশকে ডোমেইন অর্থাৎ .com বা .org এর উৎপত্তি হল, ফলে ওয়েবসাইট এর সংখ্যা বাড়তে লাগল। ১৯৮০ সালেই ইউরোপের গবেষক, টিম বার্নাস লি WWW বা World Wide Web আবিষ্কার করলেন এবং তিনিই ১৯৮৯ সালে HTTP আবিষ্কার করলেন। এতে অনলাইনে অতি দ্রুত তথ্য আদান প্রদান করা সম্ভব হল এবং এতেই হল বাজিমাত। এভাবেই ইন্টারনেট আমাদের মাঝে তার জায়গা করে নিল।

ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে?

আপনি যদি কাউকে প্রশ্ন করেন ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে তাহলে অনেকেই বলবে ইন্টারনেট মহাকাশে থাকা স্যাটেলাইটের সাহায্যে কাজ করে নতুবা বলবে জানে না। কিন্তু ইন্টারনেট – এর ৯৯% চলে অপটিক্যাল ক্যাবলের মাধ্যমে অর্থাৎ তারের মাধ্যমে এবং মাত্র ১% চলে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে।

ইন্টারনেটের যে তথ্য আমাদের কাছে এসে পৌছায় তা ৩ টি আলাদা আলাদা স্তরের মধ্য দিয়ে আসে। এই স্তরগুলোকে Tier বলা হয়। এই স্তর ৩ টি হল Tier 1, Tier 2 এবং Tier 3।

Tier 1 কি?

Tier 1 হল সেই সমস্ত কোম্পানি যারা নিজেদের টাকায় সমস্ত পৃথিবীতে সমুদ্রের মধ্য দিয়ে ক্যাবল বিছিয়ে রেখেছে(যাদের অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল বা সাবমেরিন ক্যাবল বলা হয়)। ক্যাবলগুলো চুলের মত সরু কিন্তু এরা খুব দ্রুত যেমন ১০০ থেকে ২০০ জিবিপিএস পর্যন্ত ডেটা আদান প্রদান করতে পারে। বিভিন্ন দেশে আলাদা আলাদা Tier 1 কোম্পানি আছে যারা এক দেশ থেকে অন্য দেশে ক্যাবল বিছিয়ে সারা পৃথিবীকে যুক্ত করেছে।এভাবে একটি দেশের এক প্রান্তে অপটিক্যাল ফাইভার ক্যাবলের ল্যান্ডিং পয়েন্ট থাকে ( আপনি ইচ্ছা করলে এখানে ক্লিক করে সারা পৃথিবীতে সাবমেরিন ক্যাবলের মানচিত্র দেখে নিতে পারেন।) বাংলাদেশের Tier 1 কোম্পানি হল Bangladesh Submarine Cable Company Limited )। এবার ল্যাডিং পয়েন্ট থেকে দেশকে(বাংলাদেশের ক্ষেত্রে) বিভিন্ন জেলায় এবং জেলাকে বিভিন্ন উপজেলায় Tier 2 এবং Tier 3 এই ২ স্তর ভাগ করে আপনার লোকালয়ে আপনার হাত পর্যন্ত পৌছে দেয় ইন্টারনেট।

Tier 2 কি?

দেশের সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে Tier 1 কোম্পানি ফাইবার ক্যাবলগুলো নিয়ে আসে। এরপর সেই দেশের বিভিন্ন কোম্পানি যেমন বাংলাদেশের গ্রামীনফোন, বাংলালিংক ইত্যাদি কোম্পানিগুলো Tier 1 কোম্পানির ক্যাবল থেকে সংযোগ নেয় এবং প্রতি জিবি হিসেবে একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা Tier 1 কোম্পানিকে দিয়ে থাকে। তাহলে এই গ্রামীনফোন, বাংলালিংক ইত্যাদি কোম্পানিগুলো হল Tier 2 কোম্পানি।

Tier 3 কি?

এলাকা ভিত্তিক কিছু ISP বা Internet Service Provider রয়েছে যাদের Tier 3 কোম্পানি বলা হয়। এরা এলাকা ভিত্তিক সার্ভিস দেয়।