রাজধানীর উত্তরায় প্রাইভেট কারে গার্ডারচাপায় মৃত্যুর দায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের
বউভাতের অনুষ্ঠান শেষ করে ফিরছিলেন বাসায়। পথে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে নিহত হয়েছেন পাঁচজন।
রাজধানীর উত্তরায় প্রাইভেট কারে গার্ডারচাপায় শিশুসহ পাঁচজন নিহতের ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি দেখছে তদন্ত কমিটি। প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে এই প্রাণহানির জন্য চীনের গেজহুবা গ্রুপকে দায়ী করা হয়েছে।
আজ বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশ করেন সড়ক পরিবহন বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।
তিনি বলেন, এ ধরনের কাজ করতে হলে আগের দিন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কর্মপরিকল্পনা দেয়। সে অনুযায়ী কাজ চলে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরামর্শককে জানায়নি। এ জন্য ঠিকাদার কর্মপরিকল্পনা পায়নি। তারা নিজেদের মতো করে কাজ করেছে। এ জন্য মূল দায় ঠিকাদারের।
ঢাকার উত্তরা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ চলছে।
গতকাল বিকেল সোয়া চারটার দিকে ওই প্রকল্পের নির্মাণকাজের জন্য ক্রেন দিয়ে গার্ডার ওপরে ওঠানোর সময় সেটি চলন্ত একটি প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর গাড়িটির ওপর থেকে গার্ডারটি সরিয়ে দুই শিশুসহ পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হয়েছে। এর বাইরে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা, যাতে বাংলাদেশে আর কাজ করতে না পারে, জরিমানা করা, চুক্তি বাতিলসহ নানা বিকল্প আছে বলে সচিব জানিয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান আমিন উল্লাহ নুরী।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আরও জানান, গার্ডারের ওজন ছিল ৭০ টন। আর ক্রেনের সক্ষমতা ৮০ টন। এই ক্রেন দিয়ে আগেও কাজ করেছে। ঠিকাদার দাবি করেছে, এটি রুটিন কাজ ছিল।
কিন্তু এটা রুটিন কাজ নয়। সচিব আরও বলেন, এ ধরনের কাজ করার আগে প্রকল্প পরিচালক, প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও পরামর্শককে জানানো উচিত ছিল। সেটা ঠিকাদার করেননি। অন্তত ট্রাফিক পুলিশকে জানিয়ে রাস্তাটি বন্ধ রাখলেও চলত। সেটা ঠিকাদার করেননি।
আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, প্রকল্প পরিচালকসহ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সোমবার সারা দিন শোক দিবসের কর্মসূচিতে ছিলেন। সচিবের সঙ্গে তাঁরা নানা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। এ জন্য সোমবার কাজ বন্ধ থাকার কথা।
ক্রেনের চালক পলাতক এবং তাঁকে খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সড়কসচিব। তিনি বলেন, ক্রেনচালকের লাইসেন্স ছিল কি না এবং তিনি নিয়োগ করা চালক কি না, সেটা তাঁকে ধরা গেলে জানা যাবে। প্রাথমিক তদন্তে ক্রেনচালকেরও দায় এসেছে।
গাড়ির ওপর থেকে গার্ডারটি সরাতে সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় লাগল কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, চালক পালিয়ে যাওয়ার কারণে সরানো যায়নি। পরে অন্য জায়গা থেকে চালক এনে ওই ক্রেন দিয়েই সরানো হয়েছে।
প্রকল্প কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, সবাইকে আজই কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হবে। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদনে দায়ী হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুর্ঘটনার পরই গতকাল সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আক্তারকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে আরও দুই দিন সময় চেয়েছে।