ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালি

ইউরোর ইতিহাসে এর আগে কখনো ফাইনাল না খেলা দলটিই করে বসেছিল ফাইনালের ইতিহাসের দ্রুততম গোল।কিন্ত তাতে কী? ফুটবল গোয়িং টু রোম। বৃথা গেল ওয়েম্বলির ৬০ হাজার মানুষের প্রার্থনা। ফের আর একবার ব্যর্থতার আগুনে পুড়লো ইংলিশরা। ইউরোর শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে টাইব্রেকারের নাটকীয়তায় ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালি। টাইব্রেকারে ৩-২ ব্যবধানের এই জয়ে ৫৩ বছর পর ইউরোপ সেরার শিরোপা নিজেদের করলো ইতালি।

ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম আজ কানায় কানায় পূর্ণ। ঘরের মাঠ বিধায় গ্যালারীর পূর্ণ সমর্থন ছিল হ্যারি কেইনদের। ইংলিশদের উৎসাহ দিতে উপস্থিত ছিল হাজার হাজার দর্শক। এমন টানটান উত্তেজনায় ম্যাচের শুরুতেই হোঁচট খেয়ে বসে ইতালি। ম্যাচের দুই মিনিটের মধ্যেই ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড। ইউরোর ফাইনালের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম গোলটি করলেন লুক শ। কর্নার থেকে ভেসে আসা বল ক্লিয়ারই করা নয় শুধু নিজেদের নিয়ন্ত্রণেও ধরে রাখে ইংল্যান্ড। উঠে যায় কাউন্টার অ্যাটাকে।

ইতালির বক্সের ডান পাশ থেকে বাম পাশে লম্বা পাস দেন কিয়েরান ট্রিপিয়ার। দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসা লুক শ ডান পায়ের দুর্দান্ত এক শট নেন তাতে। মুহূর্তেই বলটি জড়িয়ে গেলো ইতালির জালে। গোল করে রেকর্ডের পাতায় নাম লেখান লুক শ। আন্তর্জাতিক ফুটবলে এটাই ছিল তার প্রথম গোল। ইতালির বিপক্ষে ম্যাচের ১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের মাথায় গোলটি করেন লুক। তার গোলটিই এখন ইউরোর ফাইনালে করা সবচেয়ে দ্রুততম গোল। এর আগে ১৯৬৪ সালে পেরেদা ৬ মিনিটের মাথায় গোল করেছিলেন।

ম্যাচের ৮মিনিটে সুযোগ পায় ইতালি। বক্সের বাইরে থেকে লরেঞ্জো ইনসিগনের ফ্রি কিক। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে সেই যাত্রায় রক্ষা পায় ইংলিশরা। ম্যাচের ৩৫ মিনিটে ইংল্যান্ডের অভিমুখে আক্রমণে যান চিয়েসা। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সের বাইরে থেকে শট নেন। তা লক্ষ্যে ছিল না। তার নিচু ড্রাইভ ডানদিকের পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়।প্রথমার্ধে ম্যাচের ৬১ ভাগ সময় বল দখলে রাখে ইতালি। কিন্তু কিছুতেই হ্যারি কেইনদের রক্ষণ ভাঙতে পারেনি। শুরুর শটেই গোল পেয়ে যাওয়ায় প্রথমার্ধে রক্ষণে জোর দেয় ইংল্যান্ড। প্রথমার্ধে তেমন আক্রমণে যায়নি গ্যারেথ সাউথগ্যাটের দল।

প্রথমার্ধের দ্বিতীয় মিনিটে গোল আদায় করে নিলেও এরপর থেকেই রক্ষণাত্নক খেলতে থাকে ইংল্যান্ড। কিন্তু এভাবে বেশিক্ষণ এগিয়ে থাকতে পারেনি ইংল্যান্ড। ম্যাচের ৬৭ মিনিটে দুর্দান্ত এক গোলে ইতালিকে সমতায় ফিরিয়ে আনেন অভিজ্ঞ ফুটবলার লিওনার্দো বোনুচ্চি। ইনসিগনের নেয়া কর্নার কিক থেকে ভেসে আসা বলটিকে হেড করেন ভেরাত্তি। ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড সেটিকে ফেরানোর চেষ্টা করলেও সাইড বারে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলটি থেকে আলতো শটে ইংল্যান্ডের জালে গোল দেয় বোনুচ্চি। দ্রুততম ফাইনালের গোলের দিন সবচেয়ে বেশি বয়সীর ফাইনালে গোল দেওয়াও দেখে ফেলল ইতালি। ৩৪ বছর বয়সী বোনুচ্চির চেয়ে বেশি বয়সে কেউ ইউরোর ফাইনালে গোল করেননি।দ্বিতীয়ার্ধের বাকিটা সময় একের পর এক আক্রমণ চালালেও ৯০ মিনিটে ম্যাচের মীমাংসা হয়নি। এরপর অতিরিক্ত সময়ে আক্রমণাত্নক না হয়ে যেন প্রথাগত রক্ষণাত্মক কৌশল নিল আজ্জুরিরা। এদিকে আক্রমণে গেলেও অভিজ্ঞ কিয়েল্লিনি-বোনুচ্চি বাঁধায় হোঁচট খেয়েছে থ্রি লায়নরা। ম্যাচের মীমাংসা হয়নি অতিরিক্ত সময়ের ৩০ মিনিটেও। টাইব্রেকারেই তাই যেতে হয়েছে দুই দলকে।  আর সেখানে ভাগ্য ফিরে তাকিয়েছে ইতালি দিকে।  ৩-২ ব্যবধানে  ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ইউরো জিতে নিয়েছে আজ্জুরিরা ।

টাইব্রেকারে প্রথম শট নেন ইতালির বেরার্দি। পিকফোর্ডকে বোকা বানাতে খুব একটা সমস্যা হয়নি তার। বাঁ-প্রান্ত দিয়ে গড়ানো শটে এগিয়ে যায় আজ্জুরিরা। ইংলিশরা দায়িত্বটা তুলে দেন হ্যারি কেইনকে। একই জায়গা দিয়ে সমতায় ফেরে স্বাগতিকরা।ইতালির দ্বিতীয় শট নেন বেলোত্তি। এবার আর পিকফোর্ড হতাশ করেননি ওয়েম্বলিকে। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পরে আটকে দেন বেলোত্তির শট। ইতালি ভুল করলেও, ভুল করেন নি ম্যাগুয়ের। দুরন্ত শটে এগিয়ে দেন দলকে।

তৃতীয় শট নেন ইতালির বোনুচ্চি। ঠিক দিকে ঝাঁপ দিলেও আটকাতে পারেননি পিকফোর্ড। কিন্তু, দলের এগিয়ে থাকা সহ্য হয়নি মার্কাস রাশফোর্ডের। অবাক করা শটে পোষ্টে লাগান এই ফরোয়ার্ড।চতুর্থ শটে ইতালিয়ানদের আবারো এগিয়ে দেন বার্নার্ডোস্কি। আর রাশফোর্ডের পর ইংল্যান্ডকে হতাশা ডোবায় সানচো। কিন্তু শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচটাকে আরো উত্তপ্ত করে তোলেন জর্জিনহো। পিকফোর্ড আবারো বাঁচিয়ে দেন ইংল্যান্ডকে।কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারেনি ইংল্যান্ড। শাকার শট আটকে দেন দোনারুম্মা। ফুটবল গোয়িং টু রোম।