নারায়ণগঞ্জে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫২ জনের লাশ উদ্ধার
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকার হাসেম ফুড লিমিটেডের ছয়তলা ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তৃতীয় দিনের উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস। শনিবার সকাল ৮টা থেকে এ অভিযান শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ৫২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
হাশেম ফুডস লিমিটেড কারখানায় প্রায় ৭ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতেন। ছয় তলা ভবনে থাকা কারখানাটির নিচতলার একটি ফ্লোরে কার্টন ও পলিথিন তৈরির কাজ চলে। বৃহস্পতিবার বিকালে সেখান থেকেই হঠাৎ আগুনের সূত্রপাত। আগুনের লেলিহান শিখা বাড়তে বাড়তে পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। কালো ধোঁয়ায় কারখানাটি অন্ধকার হয়ে যায়।
একপর্যায়ে শ্রমিকরা ছোটাছুটি শুরু করেন। কেউ কেউ ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। তবে চার তলায় থাকা ৭০-৮০ জন শ্রমিক কাজ করেন। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে তারাও ছোটাছুটি শুরু করলে ওই তলার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষী গেটে তালা লাগিয়ে দেন। আগুন নিভে যাবে বলে তালা দিয়ে শ্রমিকদের বসিয়ে রাখেন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্যান্য তলার শ্রমিকরা অনেকে বের হতে পারলেও চার তলার শ্রমিকরা পারেননি। আগুনের খবর পেয়ে কেউ কেউ ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েন।
শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। এই ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের পক্ষ থেকে কেউ কোনো অভিযোগ দেননি।
তবে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম বলেছেন, কারখানা তৈরি করা হলেও সেখানে জরুরি বহির্গমনের পর্যাপ্ত সিঁড়ি রাখা হয়নি। জরুরি সিঁড়ি রাখা হলে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটত না। এ কারণে কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হবে।
আজ রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম সায়েদ বলেন, এখনো মামলা রেকর্ড হয়নি। ওই ঘটনায় কারখানায় নিহত বা আহত ব্যক্তিদের পরিবারের কেউ কোনো অভিযোগ দেননি। তবে পুলিশ বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এসপি জায়েদুল আলম বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর আমরা কারখানাটি ঘুরে দেখেছি। সেখানে অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। এ ছাড়া জরুরি বহির্গমনের জন্য বিল্ডিং কোড অনুযায়ী যেভাবে সিঁড়ি রাখার দরকার ছিল, তা এখানে ছিল না। কারখানাটি মালামালে ভর্তি ছিল। এসব কারণে আগুনের ঘটনায় শ্রমিকেরা দ্রুত কারখানা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। কারখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই ইচ্ছাকৃত অবহেলার কারণে ৫২ শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হবে।
ওই মামলায় কাকে ও কতজনকে আসামি করা হবে জানতে চাইলে এসপি বলেন, মামলার পর বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের জানানো হবে।
উলেলখ্য ,গত বৃহস্পতিবার বিকেলে হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনের ঘটনায় প্রথম দিন তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অর্ধশত শ্রমিক। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ১৮টি ইউনিট ২০ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে গতকাল শুক্রবার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ওই ভবনের চারতলা থেকে ২৬ নারীসহ ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। সব মিলিয়ে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫২ জনের প্রাণহানি হয়েছে।