পরিস্থিতি ভয়ংকর ১৬৩ জনের মৃত্যু শনাক্ত ১১ হাজার ৫২৫ জন
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ চলমান তারপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে গেছে।রোগী শনাক্তের হার এবং মৃত্যু—সবই বেড়ে চলেছে।কয়েকদিন ধরে দেশে সংক্রমণের ভয়ংকর চিত্র দেখা যাচ্ছে।এমন পরিস্থিতি গত এক বছরেও দেখা যায়নি। প্রায় প্রতিদিনই রোগী শনাক্তের সংখ্যা এবং মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন,সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধের কিছুটা প্রভাব দেখা যায়,তারা বলেন,আরও কিছুদিন নতুন রোগী ওমৃত্যু বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে।এখন গ্রামেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে বিধিনিষেধ সেভাবে কার্যকর হচ্ছে না।গত দেড় বছর ধরে চলমান করোনা মহামারিতে গতকালই প্রথম এক দিনে ১০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্তের খবর এল।গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ১১ হাজার ৫২৫ জন। একই সময়ে পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং মারা গেছেন ১৬৩ জন। বিশ্বে যেসব দেশে এখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি, এমন শীর্ষ ১২টি দেশের একটি বাংলাদেশ।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, এখন সংক্রমণ শনাক্তের হার অনেক বেশি, যা আশঙ্কাজনক। আরও কিছুদিন নতুন রোগী বাড়বে। তবে ১০ জুলাইয়ের পরে সংক্রমণ কিছুটা কমতে শুরু করবে বলে তাঁরা ধারণা করছেন। তবে মৃত্যু জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাড়তে থাকবে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে বিধিনিষেধ কতটুকু কার্যকর বা মানা হচ্ছে তার ওপর।
উল্লেখ্য দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে ৫ এপ্রিল থেকে ‘লকডাউন ঘোষণা করেছিল সরকার। এর প্রভাবে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে সংক্রমণ কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু ঈদুল ফিতরের আগে–পরে ‘লকডাউন ঢিলেঢালা হয়ে পড়েছিল। এ কারণে ঈদুল ফিতরের পর থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে।গত জুনের মাঝামাঝি থেকে প্রায় সারা দেশেই সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ১ জুলাই থেকে সারা দেশে কঠোর বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। বিধিনিষেধ চলবে ১৪ জুলাই পর্যন্ত।
সংক্রমণ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ২৮ জুন দেশে প্রথমবারের মতো এক দিনে রোগী শনাক্তের সংখ্যা আট হাজার ছাড়ায়। এরপর থেকে গত ৯ দিনে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। এই সময়ে ৭৮ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ১ হাজার ২২০ জন। অর্থাৎ এই সময়ে প্রতিদিন গড়ে ৮ হাজার ৬৬৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, আর প্রতিদিন গড়ে ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত এক বছরে কখনোই সংক্রমণ পরিস্থিতি এতটা খারাপ হতে দেখা যায়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গতকাল পর্যন্ত দেশে ৯ লাখ ৬৬ হাজার ৪০৬ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ জন, আর মৃত্যু হয়েছে ১৫ হাজার ৩৯২ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহ ধরে পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ২৫ শতাংশের ওপরে। তবে গতকাল সেটি ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এই হার থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ বাহিরে।
জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, করোনা এখন গ্রামে গ্রামে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দেন ।