মেট্রোরেলের কাজ তিন ভাগ শেষ
জাপান থেকে দেশে এসেছে দুই সেট ট্রেন। সেপ্টেম্বরের মধ্যে আরও তিন সেট ট্রেন আসছে। চার ভাগের তিন ভাগ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড বলে, আগস্টে ঢাকাবাসী উড়ালপথে ট্রেনের চলাচল দেখতে পাবে। প্রথম দফায় ট্রেন চলবে উত্তরা থেকে পল্লবী পর্যন্ত, এরপর তা চলবে আগারগাঁও পর্যন্ত। তবে এই চলাচল হবে পরীক্ষামূলক, যাত্রী চড়বে না। এভাবে বছরখানেক পরীক্ষামূলক চলবে মেট্রোরেল।
মেট্রোরেল চালু হতে পারে ২০২৩ সালের জুনের পর। এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পথটি লাইন-৬ নামে পরিচিত। এই পথের দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৬টি স্টেশন থাকছে। লাইন-৬-এর দুটি ভাগ: উত্তরা থেকে আগারগাঁও এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল। এর মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালুর অগ্রাধিকার ঠিক করেছিল সরকার।
মেট্রোরেলের একটি সেটে ছয়টি কোচ আছে।২৪টি ট্রেনের মধ্যে প্রথম সেটটি ঢাকায় এসেছে গত ২৩ এপ্রিল। এরপর উত্তরায় ডিপোতে সেটির ১৯ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। ১৪ মে ডিপোর ভেতর প্রায় ৫০০ মিটার তা চালিয়ে দেখা হয়। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় সেট ট্রেনও ঢাকায় এসেছে ১ জুন। ১৬ জুন ডিপোর ভেতর ট্রায়াল ট্র্যাকে (পরীক্ষামূলক চলাচল) মেট্রোরেল চালানো হয়েছে।
প্রথমে উত্তরা থেকে পল্লবী, পরে আগারগাঁও পর্যন্ত তা চলবে। যাত্রীসহ বাণিজ্যিকভাবে চলাচলের সময় যে গতিতে এবং যেসব নিয়ম মেনে চলাচল করার কথা, ঠিক সেভাবে ট্রায়াল রান হবে। পার্থক্য শুধু যাত্রী থাকবে না। এভাবে চলাচল করবে আরও ছয় মাস।
পাঁচটি স্টেশনের ভৌতকাজও প্রায় শেষ। বাকি ১১টি স্টেশনের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে চলমান আছে। এর বাইরে প্রতিটি স্টেশনের সঙ্গে বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা স্থাপন, লিফট ও চলন্ত সিঁড়ি বসানো, স্বয়ংক্রিয় ভাড়া আদায় ব্যবস্থাপনা, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার কাজও চলমান।বিদ্যুচ্চালিত এই ট্রেনের জন্য লাইনের দুই পাশে খুঁটি বসানো ও ওপরে তার টানা হচ্ছে। সাড়ে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত খুঁটি বসানো হয়েছে এবং তার টানানো হয়েছে ৮ কিলোমিটার।
ট্রেনে ওঠার একমাত্র পথ স্টেশন ভবন। স্টেশনগুলো তিনতলা। সড়ক থেকে লিফট, এস্কেলেটর ও সিঁড়ি দিয়ে যাত্রীরা দ্বিতীয় তলার কনকোর্স হলে উঠবে। এই তলায় টিকিট কাটার ব্যবস্থা, অফিস ও নানা যন্ত্রপাতি থাকবে। তিনতলায় রেললাইন ও প্ল্যাটফর্ম। একমাত্র টিকিটধারীরাই ওই তলায় যেতে পারবে। দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রেনের লাইনের পাশে বেড়া থাকবে। স্টেশনে ট্রেন থামার পর বেড়া এবং ট্রেনের দরজা একসঙ্গে খুলে যাবে। আবার নির্দিষ্ট সময় পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হবে।
একটি ট্রেনের দুই প্রান্তের দুটি কোচকে বলা হচ্ছে ট্রেইলর কার। এতে চালক থাকবেন। এসব কোচে ৪৮ জন করে যাত্রী বসতে পারবে। মাঝখানের চারটি কোচ হচ্ছে মোটরকার। এতে বসার ব্যবস্থা আছে ৫৪ জনের। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবে ৩০৬ জন। প্রতিটি কোচ সাড়ে ৯ ফুট চওড়া। মাঝখানের প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবে। দাঁড়ানো যাত্রীদের ধরার জন্য ওপরে হাতল এবং স্থানে স্থানে খুঁটি আছে।
প্রতিটি কোচের দুই পাশে চারটি করে আটটি দরজা আছে। অর্থাৎ ট্রেন স্টেশনে থামলে চারটি দরজা একসঙ্গে খুলে যাবে। বাকি চারটি বন্ধ থাকবে। পরবর্তী গন্তব্য সম্পর্কে থাকবে অডিও-ভিজুয়াল ঘোষণা। দুই প্রান্তের দুটি কোচে দুটি করে চারটি হুইলচেয়ার বসানোর ব্যবস্থা আছে।
প্রতিটি ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার। তবে ট্রেন কোন স্থানে কত গতিতে চলবে, সেটা ঠিক করবে কর্তৃপক্ষ।ট্রেনের নকশা প্রণয়ন ও তৈরির কাজ করছে জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়াম। তারা ট্রেন তৈরির কাজ শুরু করেছে ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, ঢাকার যানজট নিরসনে এখন মেট্রোরেল ছাড়া আর বিকল্প নেই। তাই যত দ্রুত চালু হবে, ততই মানুষ উপকৃত হবে। মানুষ মেট্রোরেলের জন্য অধীর অপেক্ষায় আছে।