স্বাস্থ্যসেবায় কোটি টাকার অনিয়ম
করোনা মহামারির প্রথম ঢেউ মোকাবিলার জন্য গত বছরের জুনের আগে জরুরি ভিত্তিতে ওই সব কেনাকাটা হয়েছিল। তখন অন্তত ৫১টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ঔষধাগারকে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করেছে। প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সুরক্ষাসামগ্রী কিনেছিল। যেসব প্রতিষ্ঠান এসব সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে, তাদের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে চুক্তি পর্যন্ত ছিল না। কেনাকাটার পুরো প্রক্রিয়ায় পণ্যের মান নিশ্চিত করার বিষয়টি ভাবা হয়নি।
ওই কেনাকাটায় গুরুতর অনিয়ম হওয়ার কথা উল্লেখ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব বরাবর গত ৯ ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়েছেন সিএমএসডির পরিচালক। এসব অনিয়মের ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে চিঠিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের উদ্যোগ নিতেও সুপারিশ করা হয়েছে।স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান সিএমএসডি। প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক তউহীদ আহমদ বলেন, ‘আমরা চিঠি পাঠিয়েছি, টাস্কফোর্স গঠন করে সমস্যা সমাধানের কথাও বলেছি। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত কোনো কিছু জানায়নি।’
সিএমএসডি থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ৩৫০ কোটি টাকার কেনাকাটায় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির প্রাথমিক প্রক্রিয়াসমূহ যেমন ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন, আনুষ্ঠানিক দর-কষাকষি, দরপত্র/প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির মতামত অনুসরণ করা হয়নি। বিপুল অঙ্কের আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থাকলেও সরকারি ক্রয়বিধি অনুসরণ করে ক্রয় অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন গ্রহণ করা হয়নি।
সিএমএসডির কর্মকর্তারা বলছেন, ওই সব কেনাকাটার জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দও তখন নিশ্চিত করা হয়নি। সিএমএসডির আগের প্রশাসনের সময় এসব অনিয়ম হয়েছে। বিধি না মেনে যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত বছর চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করেছে, তারা এখন বিল দাবি করছে। বিভিন্ন মাধ্যমে বিল পরিশোধের জন্য ক্রমাগত চাপও সৃষ্টি করছেন। সিএমএসডির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের অনাকাঙ্ক্ষিত ও বিব্রতকর পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটছে।
এসব কেনাকাটার বিষয় তদন্ত করতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও অডিট অনুবিভাগ বিভাগ) শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছিল। কমিটির তদন্তে কী বের হয়ে এল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জরুরি পরিস্থিতিতে এসব কেনাকাটা করা হয়েছিলে বলে আমরা জানিয়েছি। তবে পিপিআর অনুযায়ী বা কেনাকাটার নিয়মনীতি কোনো কিছুই মানা হয়নি, অনুসরণ করা হয়নি।’
তিনি বলেন, দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ তাঁরা করেছেন। দায়ী কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তখন কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের প্রশাসনে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন। তবে তদন্ত কমিটিকে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের কর্মকর্তারা বলেছেন, তৎকালীন পরিচালকের একক সিদ্ধান্তে ওই কেনাকাটা হয়েছে। এ অবস্থায় সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া এ সমস্যা সমাধান হবে না।
ওই সময় যাঁরা করোনা শনাক্তের কিট এবং পিপিই সরবরাহ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে তিনজন ঠিকাদার বলেন, সিএমএসডির তৎকালীন পরিচালক তাঁদের অনুরোধ করেছিলেন। আবার অনেক সময় তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলিয়ে দিয়েছেন। তখন পরিস্থিতি এমন ছিল যে চুক্তি, নিয়ম—এসব বিষয় নিয়ে ভাবার সময় ছিল না।