৫ থেকে ৫০ তরমুজ
গ্রামের এক চাষি এবার ১২ একর জমিতে তরমুজ আবাদ করেন। এতে তাঁর তিন লাখ টাকা খরচ হয়। এবার প্রতি একর ১ লাখ টাকা করে ১২ একর জমির তরমুজ বিক্রি করেছেন ১২ লাখ টাকায়। প্রতি হেক্টরে (আড়াই একরে এক হেক্টর) এবার গড়ে ৪৫ টন তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে তাঁর। সেই হিসাবে তিনি ৪৫ টন তরমুজ বিক্রি করেছেন আড়াই লাখ টাকায়। কেজি দরে হিসাব করলে তাতে প্রতি কেজি তরমুজ তিনি পাইকারের কাছে বিক্রি করেছেন ৫ টাকা ৫৫ পয়সায়।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে এবং বাজারে ঘুরে জানা যায়, কৃষকদের কাছ থেকে ফড়িয়ারা ‘খেত মূলে’ তরমুজ কিনে পাইকারি মোকামে এনে এক ধাপ লাভে বিক্রি করেন। আবার পাইকারি মোকাম থেকে আরেক ধাপ লাভে ‘শ মূলে’ খুচরা ব্যবসায়ীরা কেনেন। এরপর খুচরা ব্যবসায়ীরা আবার ভোক্তা পর্যায়ে তা কেজি দরে আরেক দফা লাভে বিক্রি করেন। ফলে তিন হাত ঘুরে এই তরমুজের দাম এলাকাভেদে ১০ গুণও বেড়ে যায়।
কুমিল্লা ও ময়মনসিংহে তা পাইকারি বিক্রি করেছেন তিন থেকে পাঁচ কেজি ওজনের শ বিক্রি করেছেন ২০ হাজার, ৫ থেকে ১০ কেজি ওজনের (মাঝারি আকারের) তরমুজের শ বিক্রি করেছেন ২৮ হাজারে আর ১০ থেকে ১৮ কেজি ওজনের শ বিক্রি করেছেন ৪৫ হাজার টাকায়। তাঁরা জানান, ৫ হাজার ৫০০ তরমুজ কিনে বিক্রি পর্যন্ত তাঁদের পরিবহন ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর বিক্রি করেছেন ১২ লাখে। লাভ প্রায় ৫ লাখ টাকা।
খুচরা বাজারে তরমুজের বেশি দামের বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক আফতাব উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যত দূর খোঁজ নিয়ে জেনেছি, এবার কৃষকেরাও তরমুজের ভালো দাম পেয়েছেন। মূলত এবার তীব্র গরম, রমজান এবং লকডাউনের মধ্যে পরিবহনের কোনো বাধা না থাকায় বাজার সম্প্রসারণ হওয়ায় তরমুজের চাহিদা বেশি। তাই বাজারে হয়তো দামও কিছুটা বেশি।’
কৃষি বিভাগ বলছে, দেশে এবার তরমুজ আবাদ হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় আবাদ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টরে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দক্ষিণের এই বিভাগে এবার ১২ লাখ টনের বেশি তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে। প্রতি কেজি ১০ টাকা মূল্য ধরা হলেও উৎপাদিত এই তরমুজের বাজারমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ২২৪ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু দক্ষিণের তরমুজকেন্দ্রিক এই বড় অর্থনীতির কম অংশই প্রান্তিক কৃষকের পকেটে যাচ্ছে।