অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে প্রস্তুত থাকেন সবসময়
নারী বাইক রাইডার লিজা হোসেন প্রস্তুত থাকেন অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে, কখন ডাক পড়বে তার তো কোনো ঠিক নেই।ফোন পেলেই স্কুটি নিয়ে বের হতে হবে। অক্সিজেন সিলিন্ডার স্কুটিতে বেঁধে পৌঁছে দিতে হবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীর বাড়িতে।মিরপুর, বসুন্ধরা, হাতিরঝিল, গ্রিনরোড, মিরপুর, পল্লবীসহ যখন যেখানে প্রয়োজন, সেখানে সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়েছেন। এ কাজের জন্য তিনি মাসিক কোনো বেতন পাচ্ছেন না। সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়ার পর দূরত্ব অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পাচ্ছেন। এ দিয়েই স্বামীর সঙ্গে হাল ধরেছেন সংসা
বেসরকারি সংগঠন পে ইট ফরোয়ার্ড বাংলাদেশ এবং মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গত বছর থেকে শুরু হওয়া অক্সিজেন ব্যাংকে নারী রাইডার হিসেবে কাজ করছেন লিজা। সংগঠন দুটি মূলত দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি দেয়। যাঁরা শিক্ষার্থীদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন, তাঁদের দাতা না বলে অভিভাবক বলা হয়। সংগঠন দুটি গত বছর করোনার সুরক্ষা পোশাক পিপিই বিনা মূল্য বিতরণ করে।
বর্তমানে তেজগাঁও থেকে অক্সিজেন ব্যাংকের কার্যক্রম স্থানান্তর করতে হয়েছে। গত বছর ব্যাংকের জন্য নিজের কারখানার একটি অংশ ছেড়ে দিয়েছিলেন একজন অভিভাবক ও মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কো–অর্ডিনেটর ফজলে মাহমুদ। আর এবার এ কাজে এগিয়ে এসেছেন আরেকজন অভিভাবক মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার এবং ১০০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুস্বাস্থ্য হাসপাতালের পরিচালক মনিরুজ্জামান সিদ্দিকী। হাসপাতালের গ্যারেজেই রাখা হয়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডার। লিজা হোসেন সেখান থেকে নিয়েই তা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন।
ঢাকাসহ ২১ জেলায় গত বছর বিনা মূল্যে অক্সিজেন ব্যাংক থেকে মানুষ সেবা পেয়েছে। তবে ১ এপ্রিল থেকে সিলিন্ডারের রিফিল চার্জ হিসেবে ৫০০ টাকা এবং বাসায় পৌঁছে দিলে দূরত্ব অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। ভাড়ার টাকাটা পাচ্ছেন বাইক রাইডাররা। ঢাকায় লিজা হোসেনসহ দুজন এ কাজ করছেন। তবে সারা দেশে রাইডারদের মধ্যে একমাত্র নারী হলেন লিজা।
লিজা হোসেনকে রাইডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার আগে তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে ভেবেছেন সংগঠন দুটি পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কর্তা ব্যক্তিরা। পে ইট ফরোয়ার্ড বাংলাদেশের কো–অর্ডিনেটর ইকবাল হোসেন ভূইয়া বললেন, দেশে লকডাউন শুরু হলে ফেসবুকে রাইডার লাগবে বলে একটি ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে প্রথম যোগাযোগ করেন লিজা হোসেন। নারী হিসেবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি তিনি করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে দ্বিধা ছিল। তবে তিনি ভালোভাবেই দায়িত্ব পালন করছেন। ফোন পেয়েই হাজির হয়ে যাচ্ছেন।
রাজধানীর মহাখালীতে দুই সন্তান ও স্বামী নিয়ে থাকেন লিজা। স্বামী গুলশানের একটি আবাসিক হোটেলের গাড়িচালক। করোনায় তাঁর বেতন কমে অর্ধেক হয়েছে। ২০–২২ বছর বয়সী ছেলে আগে চাকরি করতেন, করোনায় তিনিও কাজ হারিয়েছেন। লিজার আরেক সন্তানের বয়স ছয় বছর। স্বামী ও তাঁর টাকা দিয়েই টেনেটুনে চারজনের সংসার চলছে।
লিজা বললেন, ‘তানিয়া নামের এক আপা আগে থেকেই ভাড়ার বিনিময়ে আমার স্কুটিতে চড়তেন। আপা ফোন দিয়ে বললেন, আপার শ্বশুর অসুস্থ। ডেমরায় থাকেন। আপাই অক্সিজেন ব্যাংকের ঠিকানা দিয়ে এখান থেকে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার তাঁর শ্বশুরের বাসায় পৌঁছে দিতে বলেন। আমি তা পৌঁছে দিই। পরে আমি এখানে কাজের জন্য যোগাযোগ করি।
কাজ করছি কয়েক দিন হলো। অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে কোনো বাসায় গেলে ওই বাসার সদস্যরা আমাকে অনেক দোয়া করেন। আমিও সবার কাছে দোয়া চাই। সিলিন্ডার ফেরত আনতে গিয়ে যখন শুনি যাঁর জন্য সিলিন্ডার নেওয়া হয়েছিল, তিনি মারা গেছেন, তখন খুব খারাপ লাগে।’ শুধু পৌঁছে দেওয়ায় নয়, এর ব্যবহার সম্পর্কেও বুঝিয়ে দেন। করোনায় কেউ মারা গেলে বা সিলিন্ডার আর ব্যবহার করতে না হলে সেই সিলিন্ডারও আবার ফিরিয়ে আনার কাজটা তাঁকেই করতে হয়।