আবাসন প্রকল্পে নকশা  

সুশৃঙ্খল ও পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা গড়া, ভোগান্তি ও দুর্নীতি কমাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নকশা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্তটি হয় গত ২৬ নভেম্বর এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায়। এতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সূত্র জানিয়েছে, সিদ্ধান্তটি কার্যকর করতে এ-সংক্রান্ত বিধিবিধান সংশোধনের কাজ চলছে।

ঢাকায় রাজউকের আওতাধীন এলাকায় এখন ভবন নির্মাণ করা হয় ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী। বর্তমানে ভবন নির্মাণের জন্য প্লটের আয়তন অনুযায়ী রাজউকের কাছ থেকে প্রথমে ছাড়পত্র নিতে হয়। পরে নকশা বা নির্মাণ অনুমোদন নিতে হয়।

নিয়ম অনুযায়ী, আবেদনের ৩০ দিনের মধ্যে ছাড়পত্র ও ৪৫ দিনের মধ্যে নকশার অনুমোদন দেওয়ার কথা। কিন্তু তদবির ও দৌড়ঝাঁপ ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নকশার অনুমোদন পাওয়া যায় না। আবার নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে ঘুষ লেনদেনের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

প্লটমালিকের ইচ্ছেমতো নকশার ক্ষেত্রে আরেকটি সমস্যার কথা বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের মতে, এখন ভবন কত উচ্চতায় নির্মাণ করা যাবে, তা নির্ভর করে প্লটের আকার, পাশের রাস্তা ও ভূমির প্রকৃতির ওপর। এতে একই এলাকায় একই আয়তনের প্লটে ভিন্ন ভিন্ন আকৃতি ও উচ্চতার ভবন নির্মাণ হয়। ফলে আবাসিক এলাকার সৌন্দর্য নষ্ট হয়। পাশাপাশি ভবনের সংখ্যা অনুযায়ী নাগরিক পরিষেবার চাহিদা নির্ধারণও কঠিন হয়ে পড়ে।

দীর্ঘ আলোচনার পর সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে ইতিমধ্যেই সরকারের যেসব আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেসব প্রকল্প এলাকায় প্লটের আয়তনভেদে একাধিক নকশা নির্দিষ্ট করে দেওয়া যেতে পারে। ভবিষ্যতে সরকারের আবাসন প্রকল্পে প্লটের সঙ্গেই নকশা নির্দিষ্ট করে দেওয়া থাকবে। এ ক্ষেত্রেও নতুন করে নকশা অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।

এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে পূর্বাচলে একটি প্লটের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,” নকশা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার উদ্যোগটি ভালো। তবে নকশা করাতে হবে দক্ষ ও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে। যেনতেন নকশা করা হলে সৌন্দর্য বাড়ানোর বদলে তা নষ্ট করবে।“

বর্তমানে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাগুলোই মূলত সরকারিভাবে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এর মধ্যে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ও রাজউক যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মতো সংস্থাগুলো। এর বাইরে পৌরসভাও চাইলে আবাসন প্রকল্প নিতে পারে। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন নিয়মটি সবার ক্ষেত্রে কার্যকর করা হবে।

আন্তমন্ত্রণালয় সভার কার্যবিবরণীতে আরও উল্লেখ করা হয় যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ‘জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্প’ কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই এই পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। তাঁরা প্রকল্পে ভবনের জন্য ইউনিট (সিঙ্গেল, ডাবল) অনুযায়ী কয়েকটি নকশা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। এ ছাড়া আবাসন প্রকল্পটিতে সেক্টর অনুযায়ী বাড়ির রংও সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

রাজউকের তথ্য অনুযায়ী, তাদের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ২৫ হাজার ১৬টি ও ঝিলমিল আবাসিক এলাকায় ১ হাজার ৭৪০টি প্লট রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন হলে এসব প্রকল্প এলাকার প্লটের মালিকেরা নকশা অনুমোদনের হয়রানি থেকে মুক্ত হবেন।