মেট্রোরেলের ভাড়ার প্রস্তাবণা

দেশে যানজট কমাতে তৈরি হচ্ছে মেট্রোরেল। আর এই মেট্রোরেল বাস্তবায়নের কাজও চলতে অতি দ্রুত গতিতে। এরই মধ্যে মেট্রোরেলের পিলার বসানোর কাজ শেষ। এখন চলতে স্প্যান বসানোর কাজ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মেট্রোরেলের স্প্যান বসছে। কারওয়ান বাজার সিগন্যাল থেকে বাংলা মোটর সিগন্যাল পর্যন্ত মেট্রোরেলের স্প্যান বসানো শেষ পর্যায়ে। আর মেট্রোরেলে ভাড়া কত হতে পারে সেজন্য প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলে (এমআরটি-৬) প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৪০ পয়সা ভাড়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। রোববার অনুষ্ঠিত ভাড়া নির্ধারণ কমিটির প্রথম সভা থেকে এ প্রস্তাব করা হয়।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে এটাই চূড়ান্ত হবে। তবে ভাড়া আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। নির্ধারণ করা হবে পৃথক সর্বনিম্ন ভাড়া।

মেট্রোরেল আইন-২০১৫ অনুযায়ী ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি রয়েছে ভাড়া নির্ধারণে। পরিচালনা ব্যয় বিশ্লেষণ করে কমিটি ভাড়া প্রস্তাব করেছে। তবে প্রস্তাবিত ভাড়া কার্যকর হলেও সরকারের মুনাফা উঠবে না মেট্রোরেল থেকে। শুধু পরিচালন ব্যয় উঠবে। লাভ করতে হলে ভাড়া আরও বাড়াতে হবে।

২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রোরেলের দিয়াবাড়ী থেকে উত্তরা পর্যন্ত ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৮ টাকা ২৫ পয়সা। কমিটির প্রাক্কলন অনুযায়ী, দিনে চার লাখ ৮৩ হাজার যাত্রী মেট্রোরেল ব্যবহার করবে। যাত্রী এর চেয়ে কম হলে পরিচালন ব্যয় উঠাতে ভাড়া বাড়াতে হবে।

২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ চলছে। আগামী বছরে এর একাংশ চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রকল্প ব্যয়ের ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। বাকি পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা দিচ্ছেন সরকার।

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ‘ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)’ ভাড়া নির্ধারণ কমিটির সভার হিসাবে প্রতি মাসে পরিচালন ব্যয় হবে ৬৯ কোটি ৯১ লাখ ৭২ হাজার ২২৯ টাকা। দৈনিক ব্যয় হবে দুই কোটি ৩৩ লাখ পাচঁ হাজার ৭৪১ টাকা। এর মধ্যে দুই কোটি টাকার বেশি যাবে শুধু জাইকার ঋণ ও সরকারের ব্যয় পরিশোধে। দৈনিক বৈদেশিক ঋণ বাবদ যাবে এক কোটি ৫৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪৮৫ টাকা। সরকারের ব্যয় জোগাতে ৪৯ লাখ ৯১ হাজার ১৮৫ টাকা লাগবে দিনে।

মেট্রোরেল পরিচালনার বেতন ভাতা বাবদ দিনে ১৩ লাখ ৯ হাজার ৭১৭ টাকা প্রয়োজন হবে। অন্যান্য প্রাশাসনিক খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ১১ হাজার ৬৮৫ টাকা। মেট্রোরেলের রক্ষাবেক্ষণে দিনে সাত লাখ টাকার প্রয়োজন হবে। ট্রেন পরিচালনায় দিনে বিদ্যুত বাবদ ৬৭ হাজার ৯৮৫ টাকা খরচ হবে। বিদ্যুতের বর্তমান দাম ধরে এ হিসাব করা হয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়লে ভাড়াও বাড়াতে হবে। অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৩৫ হাজার ৭৯৩ টাকা।

দৈনিক দুই কোটি ৩৩ লাখ পাঁচ হাজার ৭৪১ টাকা ব্যয় মেটাতে চার লাখ ৮৩ হাজার যাত্রী হলে কিলোমিটারে দুই টাকা ৪০ পয়সা ভাড়া নিতে হবে। ভাড়া নির্ধারণ কমিটির প্রধান ডিটিসিএ’র নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান বলেন, তারা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, কিলোমিটার প্রতি ভাড়া প্রস্তাব করেছেন। মন্ত্রণালয় তা যাচাই-বাছাই করবে। ভাড়া চূড়ান্ত করবে সরকার। তা প্রস্তাবিত ভাড়ার চেয়ে কম/বেশি হতে পারে। মেট্রোরেল আইন ২০১৫ এর ১৮ (২) অনুযায়ী, পরিচালনা ব্যয় ও জনসাধারণের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় ভাড়া নির্ধারণ করা হবে।

বিধিমালার ২২ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, বিবেচনায় নেওয়া হবে গণপরিবহনের ভাড়া। ঢাকার গণপরিবহনে প্রতি কিলোমিটারে বড় বাসে ভাড়া এক টাকা ৭০ পয়সা, মিনিবাসে ১ টাকা ৬০ পয়সা। বড় বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা। মিনিবাসে ৫ টাকা। মেট্রোরেলেও থাকবে সর্বনিম্ন ভাড়ার নিয়ম।

২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেট্রোরেলে স্টেশন থাকবে ১৬টি। কোনো কোনো স্টেশনের দূরত্ব এক কিলোমিটারেরও কম। ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার স্টেশনের দূরত্ব পৌনে এক কিলোমিটারের মতো। এত স্বল্প দূরত্বে কিলোমিটার হিসাবে নয়, বরং পৃথক সর্বনিম্ন ভাড়া থাকবে। কমিটি সূত্রে জানা গেছে, সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা হতে পারে। অর্থাৎ মেট্রোরেলে চড়লেই ১০ টাকা লাগবে।

২০২২ সালের জুনে মেট্রোরেল চালুর ঘোষণা দেওয়া হবে। তবে এর মধ্যেই এমআরটি-৬ এর দৈর্ঘ্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এসেছে। মতিঝিল থেকে এক দশমিক ৬ কিলোমিটার দূরে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের সামনে গিয়ে হবে আরেকটি মেট্রোরেলে স্টেশন। সেক্ষেত্রে মেট্রোরেলের স্টেশন একটি বাড়বে। সড়কের ওপর নির্মিত এসব মেট্রোরেল লাইনের নীচ দিয়ে স্বাভাবিকভাবে যান চলাচল করবে। এছাড়া মেট্রোরেল স্টেশনে থাকবে বাণিজ্যিক স্পেসও।