‘কীটনাশক খাইয়ে’ যুবকের প্রাণনাশ, পরে মায়ের মৃত্যু

পাবনায় এক যুবককে ‘কীটনাশক খাইয়ে’ হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে; যার একদিন পর ওই যুবকের মাও প্রাণ হারান।

গত মঙ্গলবার রাতে সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের চর আশুতোষপুর গ্রামে ওই যুবকের মৃত্যু হয়; পরদিন মারা যান তার মা।

তবে ওই ইউপি সদস্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এদিকে, থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে বলেও স্বজনরা অভিযোগ করেন।

মৃত সবুজ ফকির (২২) চর আশুতোষপুর গ্রামের আব্দুস সালাম ফকিরের ছেলে।

নিহতের স্বজনরা জানান, সবুজ ফকিরের সঙ্গে একই গ্রামের এক নারীর পরকীয়া সম্পর্ক আছে অভিযোগ তুলে সম্প্রতি সালিশের আয়োজন করেন ৪ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আবু সাইদ।

সবুজ ফকিরের জাতীয় পরিচয়পত্রসবুজ ফকিরের জাতীয় পরিচয়পত্রসবুজের বাবা আব্দুস সালাম ফকির অভিযোগ করেন, কোনো প্রমাণ ছাড়াই সালিশে সবুজকে দোষী সাব্যস্ত করে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সে টাকা আদায়ে সময় বেঁধে দিয়ে জোরপূর্বক সুদে টাকা ধার নিতেও বাধ্য করেন সাইদ মেম্বার।

“আমার ছেলের সাথে কারো অনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। ভাই বোনের সম্পর্ককে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সাইদ মেম্বার তাকে সালিশে জরিমানা করে। জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে সই নিয়ে টাকা দিতে চাপ দেয়। ২৯ ডিসেম্বর রাত ১১টায় বাড়ি থেকে ডেকে গলায় ছুরি ধরে তাকে কীটনাশক (গ্যাস ট্যাবলেট) খেতে বাধ্য করে। বাড়ি ফিরে একথা জানাতেই আমার হাতের উপরই ছেলে মারা যায়।”

“ছেলে হারানোর শোকে তার মাও মারা গেছেন। আমার আর বেঁচে থেকে কী লাভ?” বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

সালাম ফকির বলেন, সবুজের মৃত্যুর পরদিন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মা আনোয়ারা খাতুন (৫০) মারা যান।

এদিকে, হত্যার অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে বিষয়টিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র দাবি করেন ইউপি সদস্য আবু সাইদ।

তিনি বলেন, স্থানীয় মুরুব্বী গ্রামবাসীর মতামতের ভিত্তিতেই সালিশের রায় ও জরিমানা হয়েছে। তবে টাকা আদায়ে কোনো চাপ দেওয়া হয়নি।

পাবনা সদরের দোগাছি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবু সাইদপাবনা সদরের দোগাছি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবু সাইদ“সে কীভাবে মারা গেছে তাও আমার জানা নেই। ইউপি নির্বাচন সামনে রেখে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।”

মৃত সবুজের চাচা সুরুজ দেওয়ান অভিযোগ করেন, ‘গত ৩০ ডিসেম্বর আমরা বিচার চেয়ে থানায় অভিযোগ দিলেও হত্যা মামলা না নিয়ে অপমৃত্যু মামলা রজ্জু করেছে পুলিশ। সবুজকে সাইদ মেম্বার হত্যা করেছে, এটি কোনোভাবেই অপমৃত্যু নয়। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।”

এই ব্যাপারে পাবনা সদর থানার ওসি নাসিম আহমেদ বলেন, মামলা না নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। পরিবার থেকে হত্যা মামলা দেওয়া হয়নি। অপমৃত্যু মামলা দায়েরের পর ময়নাতদন্ত হয়েছে। এতে হত্যার প্রমাণ মিললে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।