বাংলাদেশ-চীন যৌথ মালিকানায় তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র

বাংলাদেশ-চীন যৌথ মালিকানায় পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের লোন্দা ও নিশানবাড়িয়া মৌজায় দ্বিতীয় তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং ৬৬০ মেগাওয়াটের দ্বিতীয় ইউনিট একই বছরের আগস্ট মাসে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। সে লক্ষ্যে এর যাবতীয় কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে।

নির্বাহী পরিচালক সেলিম ভূঁইয়া  বলেন, “সরকারের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আরপিসিএল ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ছাড়াও অন্যান্য ধরনের জ্বালানিসহ মোট ২ হাজার ৭৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। “এই লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে লোন্দা ও নিশানবাড়িয়া মৌজায় ৯১৫ দশমিক ৭৪ একর জমির ওপর এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরু করার আগে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পরামর্শক নিয়োগ করে পরিপূর্ণ সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য পরিবেশগত সমীক্ষা (ইআইএ) সম্পন্ন হয়েছে এবং ২০১৭ সালের ২ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ছাড়পত্রও প্রদান করা হয়েছে। কয়েকটি বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আরপিসিএলের সঙ্গে যৌথ অংশীদারত্বের ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আগ্রহ প্রকাশ করলেও চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন লিমিটেডের (আরএনপিএল) কারিগরি ও আর্থিক সক্ষমতা বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক গৃহীত হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের অনুমোদনের ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ৯ মে এ কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নে আরপিসিএল ও আরএনপিএলের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ইউএসডি ১ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ হিসেবে প্রদান করবে।

অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২০১৮ সালের ২৬ জুন আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হয়। ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট থেকে ঠিকাদার কাজ শুরু করেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বয়লার, স্টিম টারবাইন ও জেনারেটর নির্মাণে ঠিকাদার কর্তৃক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে, যার অধিকাংশ ম্যানুফ্যাকচারিং শেষ পর্যায়ে এবং ২০২১ সালের মে মাস থেকে পরবর্তী ৮ মাসের মধ্যে প্রধান যন্ত্রপাতিসমূহের ফ্যাক্টরি ইন্সপেকশন সম্পন্ন হবে। বর্তমানে পাইলিংসহ মালামাল হ্যান্ডলিং জেটি, একসেস রোডসহ প্রকল্পের কার্যালয় ও আবাসনসুবিধার নির্মাণকাজ চলমান। ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের প্রায় ২৭ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

কয়লাভিত্তিক এ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতিদিন প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন কয়লা প্রয়োজন হবে। ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আমদানি করা হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে, যাতে কয়লা পোড়ানোর ফলে ক্ষতিকর পদার্থের নিঃসরণ তুলনামূলক কম হয়। এ ছাড়া কেন্দ্রটি হবে পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব। এর কোনো ছাই বা ধোঁয়া পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এতে ২২০ মিটার উঁচু চিমনি থাকবে।