ভয়ংকর ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আচরণে অভাবিত হুমকির মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। ক্ষমতায় টিকে থাকতে ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জোর করে ভোটের হিসাব পাল্টে দেওয়া থেকে শুরু করে সামরিক শক্তি ব্যবহারের হুমকি পর্যন্ত দিতে দ্বিধা করছেন না।
জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের অবশিষ্ট দুটি আসনে পুনর্নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে মঙ্গলবার। এই দুই আসনে দুই রিপাবলিকান প্রার্থী ডেভিড পারডু ও কেলি লফলারের বিরুদ্ধে লড়ছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির জন আসফ ও রেভারেন্ড রাফায়েল ওয়ারনক। ইতিমধ্যে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। সর্বশেষ জনমত জরিপে আসফ ও ওয়ারনক গড়ে ২ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে। এই নির্বাচনেই নির্ধারিত হবে মার্কিন সিনেটের নিয়ন্ত্রণ কোন দলের কাছে যাবে। চূড়ান্ত ফলাফল জানতে অবশ্য কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
আগামীকাল বুধবার, অর্থাৎ ৬ জানুয়ারি, মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষ এক যৌথ অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের হিসাব চূড়ান্ত করবে। এরপর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে, কে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ওই সভার সভাপতি। কাজেই তাঁকেই এই ঘোষণা দিতে হবে। চূড়ান্ত ফলাফল অবশ্য আগেই জানা, ৩০৬ ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঝুলিতে জমা পড়েছে ২৩২ ভোট। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে একজন প্রার্থীকে ন্যূনতম ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পাওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এখন ট্রাম্পের শেষ ভরসা বুধবারের ইলেকটোরাল কলেজ ভোট গণনা। ট্রাম্পের উৎসাহ পেয়ে ১৫০ জনের মতো রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য ও ১২ জন সিনেটর ইলেকটোরাল ভোটের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণার পরিবর্তে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
জর্জিয়ার সেক্রেটারি অব স্টেটের সঙ্গে ট্রাম্প যে আচরণ করেছেন, তার সঙ্গে মাফিয়া বসের আচরণের মিল খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। নির্বাচনী কাজে হস্তক্ষেপ শাস্তিযোগ্য অপরাধ, এই যুক্তিতে বাইডেন প্রশাসন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন বলেও মনে করছেন অনেকে। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিতে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের কুকর্ম ফাঁস করে দিয়েছিলেন অনুসন্ধানী সাংবাদিক কার্ল বার্নস্টাইন। তিনি বলেছেন, নিক্সনও এমন দুর্বৃত্তের মতো আচরণ করেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী উইলিয়াম কোহেন বলেছেন, ”বিশ্বের সামনে আমেরিকার মাথা কাটা গেল। এখন আমরা কোন সাহসে অন্য দেশকে নির্বাচনে কারচুপি বা অগণতান্ত্রিক আচরণের জন্য দুষব। সে নৈতিক যোগ্যতা আমরা হারিয়েছি।”
ক্ষমতায় টিকে থাকতে ট্রাম্প সামরিক আইন জারির কথা পর্যন্ত ভেবেছেন। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনিসহ মোট ১০ জন সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী সামরিক বাহিনীকে রাজনীতিতে টেনে আনার তেমন কোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় সাবধান করে দিয়েছেন। তাঁরা ট্রাম্পকে পরামর্শ দিয়েছেন, ‘নির্বাচন শেষ, এবার সামনে আগাও।’
ট্রাম্পের পক্ষে লড়ছেন, এই কথা বলে টেড ক্রুজ ও জশ হলি ইতিমধ্যে চাঁদা তোলা সংগ্রহ করে দিয়েছেন। ট্রাম্প নিজেও ২৫ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি চাঁদা সংগ্রহ করেছেন। টেড ক্রুজ যুক্তি দেখিয়েছেন, নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়া তাঁর লক্ষ্য নয়। তিনি শুধু নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের ব্যাপারটা তুলে ধরতে চান। সে কথার জবাবে সিনেটে ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার বলেছেন, ‘অনিয়ম তদন্ত করতে চান, ভালো কথা। টেলিফোনে ট্রাম্পের হুমকি নিয়ে তদন্ত করুন।’
‘নির্বাচনে ভোট চুরি হয়েছে’ বলে ট্রাম্প যেভাবে অভিযোগ করছেন এবং ভোটের হিসাব পাল্টে দিতে জর্জিয়ার নির্বাচন কর্মকর্তাদের হুমকি দিচ্ছেন, তাতে এই অঙ্গরাজ্যের পুনর্নির্বাচনে রিপাবলিকান দুই প্রার্থী বেকায়দায় পড়েছেন। আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, ভোট বেআইনি ও দুর্নীতিপূর্ণ হবে—এমন ভেবে ট্রাম্পের অনেক কট্টর সমর্থক আজকের নির্বাচনে ভোট না–ও দিতে পারেন।
আশার কথা হলো, ট্রাম্প ও টেড ক্রুজদের তৎপরতার সঙ্গে সব রিপাবলিকান নেতা হাত মেলাননি। সিনেটে রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল ইতিমধ্যে জো বাইডেনকে বিজয়ী হিসেবে মেনে নিয়েছেন। তিনি নিজ দলের সিনেটরদের ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে প্রতিবাদে যোগ না দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন। মিট রমনি, সুসান কলিন্সসহ ১০ জন মধ্যপন্থী রিপাবলিকান সিনেটর জর্জিয়ার নির্বাচন পেছন দরজা দিয়ে জয়ের চেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পেনসিলভানিয়ার সিনেটর প্যাট টুমি বলেছেন, অনিয়মের অভিযোগ তুললেই তো হবে না, তার প্রমাণ চাই। কোথায় সেই প্রমাণ?
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের অবশিষ্ট দুটি আসনে পুনর্নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে আজ মঙ্গলবার। এই দুই আসনে দুই রিপাবলিকান প্রার্থী ডেভিড পারডু ও কেলি লফলারের বিরুদ্ধে লড়ছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির জন আসফ ও রেভারেন্ড রাফায়েল ওয়ারনক।