স্বপকে বাস্তবে করে নিলেন  নিতু

নিতুর বয়স তখন মাত্র ৬ বছর। মায়ের আঙুল ধরে যেতেন চট্টগ্রামের শরিফা আর্ট স্কুলে চিত্রাঙ্কন শিখতে। এরপর স্কুলের ব্যাগভর্তি বই নিয়ে বাবার সাথে যেতেন স্কুলে। এভাবেই সময়গুলো কেটে যেত। নোয়াখালীর ভূঁইয়া পরিবারে বেড়ে ওঠা নিতু পরিবারসহ একসময় চলে এলেন চট্টগ্রামে।

বাবা নাসির উদ্দীন ভূঁইয়া ও মা সাবিনা আকতার ভূঁইয়ার আদর তাকে অনেক সাফল্য এনে দিতে সক্ষম হয়েছিল। এক বিকেলে মুঠোফোনে সেই গল্প জানাচ্ছিলেন তিনি। নিতু জানান, ব্যবসায়ী পরিবারে বেড়ে ওঠার কারণে এসব ব্যাপারে অনেক কিছু জানার আগ্রহ থাকতো। তার বড় ভাইয়ের ফেসবুক ফ্যানপেজে ব্যবসায়িক কার্যক্রম দেখে তিনিও চেষ্টা করতেন এমন কিছু করার।

তবুও ছোটবেলায় পড়াশোনায় ব্যস্ত সময় পার করতে হতো তাকে। একটা সময় তার বাবা তাকে স্বপ্নপূরণের দিকে এগিয়ে নিতে থাকেন। দশ বছর বয়সী নিতু ২০০৮ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। পরিবারের সবাই নিতুর এমন সাফল্যে বেশ খুশি হন।

তার ছবি খবরের কাগজে দেখে বন্ধুদের মাঝেও হয়ে উঠেছিলেন অনন্যা। নিতুর হাতের অঙ্কনে মুগ্ধ হতেন তার বাবা। যে কারণে মেয়েকে প্রতিটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করিয়ে পুরস্কার আর অসংখ্য সার্টিফিকেট নিয়ে ঘরে ফিরতেন।

বিপত্তি যেখানে  ছোটবেলা থেকেই ভীষণ মেধাবী ছিলেন নিতু। বাবাও চাইতেন তার একমাত্র মেয়ে মেডিকেলে ভর্তি হয়ে তাদের মুখ উজ্জ্বল করুক। কিন্তু কে জানতো শৈশব-কৈশোরে পড়াশোনায় একদম প্রথম কাতারে থাকা মেয়েটি মেডিকেল পরীক্ষায় এসে থমকে দাঁড়াবে।

তবুও শেষমেষ ঠাঁই হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে। এতে নিতুর বিষণ্নতা কাটলো না। এ ঘোর যেন তাকে দীর্ঘ তিন বছর মানসিকভাবে প্রচণ্ড বিড়ম্বনায় ঠেলে দিলো। তার ছোটবেলার এত সাফল্যের গণ্ডি পেরিয়ে আসার পর শেষ সময়ে স্বপ্নের বিপরীতে হাঁটতে হবে, ভাবতে পারেনি কেউই।

নিতু একদম চুপ হয়ে যান। একদম ঘরকুনো হয়ে যান। তখন থেকে গানের প্রতি ভালো লাগা কাজ করতে থাকে। এ ছাড়াও বইপড়ার অভ্যাস আস্তে আস্তে ফিরিয়ে আনেন। একসময় নিজের পেইন্টিংয়ের টি-শার্টও করেছিল নিতু।

একঘেয়েমি কাটাতে ‘রাংচিতা’ নামের ফেসবুক পেজ খোলেন। সেখানে ছিল নিতুর হ্যান্ডপেইন্টের টি-শার্ট, ড্রেস, কুর্তির দারুণ সব কালেকশন। খুবই সাড়া পেলেও পড়াশোনার ব্যস্ততার কারণে কাজটিতে বেশি সময় দিতে পারলেন না। কিন্তু থেমে নেই নিতু।

রান্না-বান্নার শখ ছোট থেকে থাকলেও হঠাৎ করে তার চিন্তা হলো রান্না নিয়ে কিছু করার। মূলত ডিপ্রেশন থেকে নিজেকে আবার গুছিয়ে নেওয়ার জন্যই নিতু সারাক্ষণ ড্রয়িং বা রান্না নিয়ে মগ্ন হয়ে পড়লেন।

ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প  ফেসবুকে ‘নিতুবাবুর্চির পোর্টফোলিও’ নামে একটি পেজ খোলেন তিন মাস আগে। বিস্ময়কর বিভিন্ন ডিজাইনের কেক তৈরি করে খুব কম সময়ে সাড়া পেতে থাকেন। অনেক সময় কেক বানানোর সামগ্রীও থাকতো না। টিউশনির টাকা জমিয়ে শখ পূরণের সামগ্রী কেনা শুরু করলেন।

মেয়ের কঠোর চেষ্টা দেখে নিতুর বাবা-মাও কিছু সাহায্য করতে থাকেন। আগস্ট থেকে শুরু করে প্রায় ১০০তম কেক এক হাতেই তৈরি করেন তিনি। নিতুর হাতের রান্নার এত চাহিদা দেখে কিছুদিন আগে নিতুর রান্নার ফেসবুক পেজের পথচলা শুরু হলো।

নিতুর কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘প্রথমে শখের বসে কাজ করলেও এখন মানুষের ভালোবাসার জন্যই আজ আমার পেজ। ভবিষ্যতে সবাইকে দারুণ কিছু উপহার দেওয়াই আমার লক্ষ্য। সেইসাথে বিভিন্ন ধরনের কারুকাজ, হাতের ডিজাইনে টি-শার্ট। পোর্ট্রেট স্কেচও করে যাচ্ছি।’