চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা
নাজির উদ্দিন পারভেজের জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামে। ২০০২ সালে মধ্য সন্তোষপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। মিরসরাই ডিগ্রি কলেজ ও সরকারি কমার্স কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রি শেষ করে ঢাকায় চলে আসেন।
বর্তমানে পরিবার নিয়ে রাজধানীর মিরপুরে থাকেন। পরিবারে দুই সন্তান ও স্ত্রী রয়েছে। ২০০৯ কর্মজীবন শুরু করেন। সেইসাথে সরকারি বাংলা কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে মাস্টার্স পাস করেন। চাকরি জীবনে অধিকাংশ সময় নিউটেক্স ডায়িং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেডে ছিলেন।
পরবর্তীতে তিথি টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডে চাকরি করেন। দুই প্রতিষ্ঠানে ১০ বছর চাকরি করেন কমার্সিয়াল ম্যানেজার পদে। চাকরি জীবনে স্বাধীনতার অভাব এবং কাজের মূল্যায়ন না পাওয়ায় চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন। নিজের মতো করে কাজ করার চিন্তা করেন। সেই থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ‘দইওয়ালা’ নামে ডোমেইন কেনেন। তখন থেকেই ই-কমার্স নিয়ে পড়াশোনা করতে থাকেন। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। করোনার সময়ে মাত্র ৮ হাজার টাকার দই নিয়ে অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন। মাত্র ৯ মাসে বিক্রি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখেরও বেশি।
নাজির উদ্দিন বলেন, ‘একটানা গতানুগতিক কাজ করে হাপিয়ে উঠেছিলাম। জেদ করে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বিদেশ যাওয়ার চিন্তা করি। তখন ইংরেজি শেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। ইংরেজি শেখার জন্য সার্চ ইংলিশ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা রাজিব আহমেদের অনলাইন ওয়ার্কশপে যোগ দেই। সেখান থেকেই মূলত ই-কমার্স নিয়ে জানার আগ্রহ তৈরি হয়।’
তিনি বলেন, ‘রাজিব আহমেদের মাধ্যমে একটি ফেসবুক গ্রুপে যোগ দেই। সেখানে পোস্ট, কমেন্ট, অফলাইন ইভেন্ট এবং অনলাইন ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিচিত করে তুলি নিজেকে। ব্যবসা নিয়ে জানতে যোগ দেই ডিএসবি (ডিজিটাল স্কিল ফর বাংলাদেশ) ফেসবুক গ্রুপের অনলাইন কর্মশালায়’।
নাজির বলেন, ‘মাছ নিয়ে কাজ করার আগ্রহ থাকলেও রাজিব আহমেদের পরামর্শে কাজ শুরু করি দেশের বিভিন্ন জেলার দই নিয়ে। ৪ জানুয়ারি উই গ্রুপের অফলাইন মিটআপে ৮০ জনকে বগুড়ার কাপ দই খাওয়ানোর সুযোগ হয়। তখন থেকে নিজের নামের সঙ্গে ‘দইওয়ালা’ ব্র্যান্ড যুক্ত হয়। ফেসবুকে দই লিখে সার্চ দিলে ‘দইওয়ালা’ পেজ আসে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে দইওয়ালা পেজে সবচেয়ে জনপ্রিয় মেজবান দই, মাঝারি মিষ্টি দই, মিক্সড সন্দেশ, কম্বো সন্দেশ। দইওয়ালা পেজে বর্তমানে ক্রেতা ১২শ’র উপরে। পুনরায় কিনেছেন এরকম ক্রেতা রয়েছে ২৫০ জনের উপরে। মোট দই বিক্রি ৪ হাজার সরা, মিষ্টি বিক্রি প্রায় ১০০ কেজি এবং মিক্সড সন্দেশ বিক্রি হয়েছে ৯০ কেজির উপরে।‘
‘দইওয়ালা’ পেজের ক্রেতা মনিকা আহমেদ বলেন, ‘নাজির ভাই চাকরি ছেড়ে উদ্যেক্তা হতে চাইলেন এবং হয়ে উঠলেন আমাদের দইওয়ালা ভাই। আমরা তাকে চিনি-জানি বলে দইয়ের প্রয়োজন হলে প্রথমেই নাজির ভাইয়ের কথা মাথায় আসে। আমি তার দইয়ের রিপিট কাস্টমার। নাজির ভাইয়ের দই এককথায় অসাধারণ। আমি সব সময় নাজির ভাইয়ের সফলতা কামনা করি।’