নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ করোনাভাইরাসের নতুন ধরন, সতর্কবাণী ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস নতুন যে রূপে শনাক্ত হয়েছে তা ‘নিয়ন্ত্রণে নেই’ বলে সতর্ক করে দিয়ে সবাইকে নতুন কঠোর বিধিনিষেধ মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক।

তিনি বলেন, লন্ডনসহ যেসব জায়গায় চার-স্তরের বিধিনিষেধ জারি রয়েছে তা না মানাটা “পুরোপুরি দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ হবে।”

লন্ডন এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে কিছু সময়ের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ জারি হবে জানিয়ে রোববার হ্যানকক বলেন, দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকা করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইনের কারণে সরকারকে বড়দিনে বিধিনিষেধ শিথিলের পরিকল্পনা বাদ দিতে হয়েছে।

বড়দিনের মাত্র দিন কয়েক আগেও লকডাউন বলবৎ রাখার জন্য ব্রিটিশ সরকার অনেক সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে।

তবে হ্যানকক বলছেন, নতুন স্ট্রেইনের কারণে কোভিড সংক্রমণ লাফিয়ে বেড়ে যাওয়ার আলামত পেয়ে শনিবার দ্রুতই বিধিনিষেধ জারি রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

করোনাভাইরাসের নতুন যে ধরন শনাক্ত হয়েছে সেটি মূল ভাইরাসের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি দ্রুত ছড়ায়। যদিও ভাইরাসের নতুন ‘স্ট্রেইন’ দ্রুত ছড়ালেও ততটা প্রাণঘাতী নয় বলেই এখনও বিশ্বাস করেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস যেভাবে রূপ পরিবর্তন করেছে ঠিক একইভাবে নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক এবং অস্ট্রেলিয়ায় ভাইরাসটি রূপ বদল করেছে বলে বিবিসি’কে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও।

কোভিড-১৯ এর টিকার বেলায় নতুন এই ধরনটির ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে কিনা তার প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।

ভাইরাসের নতুন ওই ধরন ছড়িয়ে পড়া আটকাতে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনসহ দক্ষিণপূর্ব ইংল্যান্ডের বড় অংশজুড়ে এখন নতুন করে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে।

নানা দেশও যুক্তরাজ্যে শনাক্ত করোনাভাইরাসের নতুন ‘স্ট্রেইন’ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে। নেদারল্যান্ডস রোববার থেকে আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ ঘোষণা করেছে। কারণ, এ মাসের শুরুতে নেদারল্যান্ডসেও পরীক্ষায় ঠিক একই ধরনের ভাইরাসের স্ট্রেইন পাওয়া গেছে।

ডব্লিউএইচও-র এপিডেমিওলজিস্ট মারিয়া ফন কেরখোভ বলেন, ‘‘মহামারীর শুরু থেকে বিশেষজ্ঞরা বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের রূপ পরিবর্তনের দিকে নজর রাখছে।”

যুক্তরাজ্যও সেখানে পাওয়া ভাইরাসের নতুন ধরনটি নিয়ে তাদের গবেষণা তথ্য ডব্লিউএইচওকে জানাচ্ছে।

ডব্লিউএইচও জানায়, ‘‘আমরা নতুন ধরনের ভাইরাসটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়ার পর সেটার বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সেটি সম্পর্কে সদস্য রাষ্ট্র এবং সাধারণ মানুষকে জানাব।”

নতুন ভাইরাস সম্পর্কে ইংল্যান্ডের প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা অধ্যাপক ক্রিস হুইটি বলেন, ‘‘আমার মনে হয় আমরা এখন যেখানে ‍দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকে পরিস্থিতি অনেক বেশি খারাপ হতে পারে। আবার একদিক দিয়ে দেখতে গেলে, এখন আমাদের হাতে সত্যিই আশাবাদী হওয়ার মত কিছু জিনিসও আছে। আমাদের হাতে এখন টিকা আছে এবং আশা করি সেটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে।”

টিকা হাতে পাওয়ার পর যুক্তরাজ্য সরকার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করতে চেয়েছিল। যাতে বড়দিনে জনগণ এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যেতে পারে।

কিন্তু ভাইরাসের নতুন ধরন শনাক্তের কারণে এখন দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের বেশিরভাগ অংশেই নতুন করে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী জনসন এইসব বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘‘চার স্তরের বিধিনিষেধের আওতায় বাসিন্দাদের অবশ্যই বাড়িতে অবস্থান করতে হবে।”

এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হানকক বলেন, ‘‘সবাই বড়দিন পালনের নানা পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের আরও বেশি সংক্রামক এবং আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়া স্ট্রেইনটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তাই সরকারকে দ্রুত এবং বিস্তারিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়েছে।”

সবাইকে নতুন বিধিনিষেধ মেনে চলার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন,  “এবারের বড়দিনে আপনি যদি বাড়িতে থাকেন এবং ভাইরাস না ছড়ান তবে সেটাই হবে মানুষ এবং সমাজের জন্য সেরা উপহার।”