সুব্রত ও তাঁর মেয়ে দীঘি

দোয়েল মারা যাওয়ার সময় ছেলে অন্তরের বয়স তখন ১৪ বছর আর মেয়ে দীঘির ৮। বাবা না থাকলেও মা-ই ছেলে-মেয়েদের বড় করে। দোয়েল মারা যাওয়ার সময় সবে কলেজে ঢুকেছে অন্তর। দীঘি একেবারেই ছোট। দোয়েল মারা যাওয়ার দিন হাসপাতালের পরিবেশের কথা স্মরণ করে সুব্রত জানালেন, দোয়েলের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাচ্ছিল দীঘি। মেয়ের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন সুব্রত।

এরপর ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। আর বিয়ে করেননি সুব্রত। সিঙ্গেল ফাদারই রয়ে গেছেন। সুব্রত বলেন, ‘এই দীর্ঘ সময়ে ছেলে ও মেয়ে—কাউকে বুঝতে দিইনি, তাদের মা নেই। আমিই মা, আমিই বাবা।’ আজ ছেলে ও মেয়ে—দুজনই বড় হয়েছে। এখন নিজের মতো করে বুঝতে শিখেছে তারা।

ছোট বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে ওই বয়সে বিয়ে করতে পারতেন সুব্রত, কিন্তু করেননি। জানালেন, দোয়েল মারা যাওয়ার সাত–আট দিনের মাথায় তাঁর পরিবার ও দীঘির খালাদের পরিবারে সুব্রতের বিয়ে নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়ে যায়। ওই সময়ই সুব্রত সিদ্ধান্ত নেন, বিয়ে করবেন না।

দোয়েলের অসুস্থতা ও মৃত্যুর কারণে প্রায় ৯ মাস দীঘির স্কুলে যাওয়া বন্ধ ছিল। মা মারা যাওয়ার পর বেশ কিছুদিন খালা ও মামাদের কাছে ছিল দীঘি। একসময় মেয়েকে কাছে নিয়ে এলেন সুব্রত। নতুন করে আবার স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন। শুরু হলো মায়ের দায়িত্ব পালন। প্রতিদিন সকালে মেয়েকে গোসল করিয়ে ড্রেস পরিয়ে স্কুলে নিয়ে যেতেন। বলেন, “স্কুলে কোনো কোনো সময় দীঘির দিকে তাকানো যেত না।

তাঁর সব বন্ধুর মায়েরা তাদের স্কুলে আনা–নেওয়া করত। সেসব দেখে মাঝেমধ্যে দীঘির মধ্যে প্রতিক্রিয়া হতো, আমি বুঝতে পারতাম। তার চোখে পানি ছলছল করত। আমার হাতটা তখন শক্ত করে ধরে থাকত। সেসব দৃশ্য বলে বোঝানো যাবে না। আমি কান্না লুকানোর চেষ্টা করেছি কতবার!”

ঢাকার চলচ্চিত্রে শুটিং বা সিনেমার মিটিংয়ে নায়িকাদের পাশে সাধারণত মাকেই দেখা যায়। দীঘির বেলায় ব্যতিক্রম, শুরুর দিকে দীঘির চলচ্চিত্রের মিটিং ও শুটিংয়ে বাবাই সঙ্গ দিয়েছেন। তবে সুব্রত মনে করেন, মেয়ে এখন বড় হয়েছে, তার ভালোমন্দ সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে।