বাঁশ দিয়ে পেটানো হবে

ক্রিকেটের আইনেই লেখা আছে, কাঠের তৈরি না হলে সে ব্যাট দিয়ে খেলা যাবে না ক্রিকেট। কিন্তু কাঠনির্ভর ব্যাটের এ সংস্কৃতির কারণে দরিদ্র দেশগুলো ক্রিকেট খেলায় পিছিয়ে পড়ছে। কারণ, অনেক দেশের ক্রিকেটারদের পক্ষে এত দামি ব্যাট কেনা সম্ভব হয় না। ঐতিহ্যবাহী ইংলিশ উইলো দিয়েই এত দিন ক্রিকেট খেলেছেন।

ব্যাটের আকারে বাঁশ কেটে একটার ওপর একটা রেখে আঠা দিয়ে জোড়া লাগানো হয়েছে। তারপর চাপ দিয়ে পৃষ্ঠ সংকুচিত করে তার ওপর রেজিন দিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। এরপরই এক ব্যাট প্রস্তুতকারক দিয়ে বানানো হয়েছে ক্রিকেট ব্যাট। এরই মধ্যে কেমব্রিজের গবেষক ডক্টর দার্শিল শাহ, মাইকেল রামেজ ও বেন টিঙ্কলার-ডেভিস মিলে কাঠের বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন বাঁশকে। গবেষণায় শুধু ওজন ছাড়া সবকিছুতেই বর্তমান ক্রিকেট ব্যাটের চেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে এ ব্যাট।

ক্রিকেট ব্যাটের বিকল্প উপাদান খুঁজতে চেয়েছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে গবেষক দার্শিল শাহ ইংলিশ উইলোর উচ্চমূল্যের কথা বলেছেন। উইলোর পর্যাপ্ত জোগান নিশ্চিত করা কঠিন। ব্যাটের জন্য উপযুক্ত কাঠ পেতে উইলোগাছের বয়স ১৫ বছর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এর মধ্যে মূল্যবান সে কাঠের ১৫ থেকে ৩০ ভাগ নষ্ট হয় ব্যাট বানানোর সময়। সে তুলনায় বাঁশ ভালো একটি উপাদান।

এ ছাড়া নতুন বাঁশের ব্যাট সবদিক থেকেই ব্যাটসম্যানদের কাজে আসবে। এ ব্যাট তুলনামূলকভাবে বেশি শক্ত। উইলোর চেয়ে তিন গুণ বেশি ধকল নিতে পারে এবং অনেক বেশি ওজন নিতে পারে। তার মানে তুলনামূলক সরু বাঁশের ব্যাট কাঠের ব্যাটের সমান শক্তিশালী হবে। ব্যাটসম্যানরা আরও জোরে ব্যাট ঘোরাতে পারবেন এবং আগের চেয়ে বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে পারবেন। উইলোর চেয়ে বাঁশের ব্যাট ২২ শতাংশ বেশি দৃঢ়। ফলে বল আরও দ্রুতগতিতে ছুটবে। আর এ ব্যাটের ‘সুইট স্পট’ ব্যাটসম্যানদের মুখে মিষ্টি হাসি এনে দেবে।

বেশ সস্তায় মেলে, বিশ্বের সব প্রান্তেই পাওয়া যায়। কাঠের তুলনায় অনেক দ্রুত বাড়ে। মাত্র সাত বছরেই ব্যবহারের পূর্ণ উপযুক্ত হয়। বাঁশ কাটার পর আগের শিকড় থেকেই নতুন করে জন্মায় বলে উইলোর মতো করে গাছ রোপণ নিয়ে ভাবতে হয় না। শাহের চোখে বিশ্বের সব প্রান্তে পাওয়া যায়, এটাই বাঁশের সবচেয়ে বড় দিক, ‘চীন জাপান বা দক্ষিণ আমেরিকা—নতুন করে যারা ক্রিকেট খেলছে, সেখানেও বাঁশের প্রাচুর্য।’

আইপিএল ও টি-টোয়েন্টির ক্রিকেটের রমরমায় মঙ্গুজ নামের এক খর্বাকৃতির আইসক্রিম–সদৃশ ব্যাটের দেখা মিলেছিল। শেষ দিকে পাওয়ার হিটিংয়ের জন্য তৈরি করা ভারী সে ব্যাটও জনপ্রিয়তা পায়নি। ম্যাথু হেইডেনের অবসরের পর মঙ্গুজ ব্যাট আড়ালে চলে গেছে। এমসিসি কাল জানিয়েছে, বাঁশের তৈরি ব্যাট যে ক্রিকেটকে সহজলভ্য করবে, এ দিক ভেবে দেখবে তারা। ক্রিকেটের প্রসারে আর্থিক দিকটা যে গুরুত্বপূর্ণ, সেটা মানছে এমসিসি। বাঁশের তৈরি এ ব্যাট মানে হেরফের না করেই স্থায়ীত্ব এনে দেবে, এ দাবি তুলেছে।