রাজধানীর জলাবদ্ধতা

দুইদিন টানা বৃষ্টিপাতে রাজধানীর বেশ কয়েকটা জায়গায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন আপাতত স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি কর্মসূচি নিয়ে এই বর্ষা পার করার চেষ্টা করছে। করপোরেশনের প্রকৌশলীদের ধারণা ঢাকায় চলতি বর্ষার পাশাপাশি আগামী বর্ষায়ও জলাবদ্ধতাকে মেনে নিয়েই চলতে হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) জলাবদ্ধতার একটি মানচিত্র তৈরি করে। ডিএনসিসির প্রকৌশল বিভাগের প্রস্তুত করা ওই মানচিত্র অনুযায়ী, উত্তর সিটির ১০৩টি স্থানে সাময়িক বা দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা হচ্ছে।

এর মধ্যে উত্তরা-১, কাওলা, মিরপুর-১৪, কল্যাণপুর, পাইকপাড়া ও হাতিরঝিল—এই ৬টি জায়গাকে বেশি সমস্যাপ্রবণ বলে চিহ্নিত করা হয়।এর আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ গত বর্ষায় সরেজমিন পরিদর্শন করে জলাবদ্ধতাপ্রবণ ৩৯টি স্থান চিহ্নিত করেছিল। পরে এর সঙ্গে আরও ১৪টি স্থান যুক্ত করে দক্ষিণে মোট ৫৩টি জায়গার জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হয়।

ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, “প্রতিবছর নতুন করে কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। জলাবদ্ধতার জায়গাগুলো চিহ্নিত হয়েছে। ছয়টি হটস্পট ধরে কাজ করা হচ্ছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে ঢাকার যেকোনো স্থানে বৃষ্টির পানি যাতে এক ঘণ্টার মধ্যে নেমে যায়, সে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।“

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তাদের চিহ্নিত ৫৩টি জায়গার জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৩৯ কোটি টাকার দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের আওতায় এবারের বর্ষা মৌসুমে অন্তত ২৫টি এলাকার নর্দমা সংস্কার ও পাইপ বসানো হচ্ছে। এর বাইরেও নর্দমা ও ফুটপাতের উন্নয়নের কিছু কাজ চলমান। ডিএসসিসির প্রত্যেক কাউন্সিলরকে এক কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এরপর খাল ও বক্স কালভার্ট পরিষ্কারের কাজ করছে দুই সিটি কর্তৃপক্ষ। তবে নগরবিদ ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু খাল পরিষ্কার রাখলেই জলাবদ্ধতার সমাধান হবে না। বৃষ্টির পানি নর্দমা হয়ে খালের মাধ্যমে নদীতে যাওয়া পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ধাপ আছে। দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ ছাড়া জলাবদ্ধতার সমাধান হবে না। তাদের আশঙ্কা, চলতি বর্ষার পাশাপাশি আগামী বর্ষাতেও জলাবদ্ধতার ভোগান্তি রাজধানীবাসীর সঙ্গী হবে।

ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে ২৬টি খাল দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর বাইরেও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজউক এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ১৭টি খাল রয়েছে। এ খাল ও জলাশয়গুলোও সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হস্তান্তরপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদকে আহ্বায়ক করে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধি নিয়ে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।

স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে খালগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। খালের সীমানা চিহ্নিত করে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে স্থানীয় সরকার বিভাগে জমা দিয়েছে।ঢাকা উত্তর সিটিও জলাবদ্ধতা নিরসন ও খাল নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করছে।

খালগুলোর সীমানা নির্ধারণ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা, খালগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে জমা মাটি অপসারণ করে ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি এবং খালের দুই পাড়ে হাঁটার রাস্তা, সাইকেল লেন ও গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি।