দূর্ভোগে চট্টগ্রাম নগরবাসী 

বর্ষা আসার আগেই চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমের প্রথম ভারী বৃষ্টিতে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন নগরের অনেক এলাকা তলিয়ে যায় পানিতে। এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনে চার বছর আগে হাতে নেওয়া প্রকল্পের কাজের অগ্রগতিও থেমে আছে আগের জায়গায়। চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে আসবে, কয়েক বছর ধরে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে এমন আশ্বাস পেয়ে আসছিল নগরবাসী। তবে আশ্বাস শুধু মুখেই, বাস্তব অবস্থা ভিন্ন।

চট্টগ্রাম নগরে ভারী বৃষ্টি ও জোয়ারের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার সময় প্রতিবছর মানুষের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে যায়। এতে নষ্ট হয় গৃহস্থালির জিনিসপত্র থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক পণ্যসামগ্রী। জলাবদ্ধতায় প্রতিবছর কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে নগরের অন্যতম পাইকারি বাজার চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ ও কোরবানীগঞ্জের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের সহায়তায় পরিকল্পনা কমিশনের ন্যাশনাল রিজিলিয়ান্স প্রোগ্রাম (এনআরপি) ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি একটি গবেষণা করে।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতায় গত এক দশকে ২ হাজার ৫১৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাঁচ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া প্রকল্পের কাজের অংশ হিসেবে নগরীর খালগুলোর মধ্যে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া খালগুলো খনন না করায় এতে জন্মেছে আগাছা।

২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়। ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে খালের আবর্জনা অপসারণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রকল্পের কার্যক্রম। ইতিমধ্যে নগরের ৩৫টি খাল থেকে ৩ হাজার ১৭৯টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ উদ্বোধনের সময় তৎকালীন সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেছিলেন, ‘এ বছর না হলেও আগামী বছর দৃশ্যমান পরিবর্তন হবে।’ ওই বছর ১২ আগস্ট সিডিএতে অনুষ্ঠিত জলাবদ্ধতা প্রকল্পের তদারকি কমিটির সভায় তৎকালীন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন বলেন, কয়েক বছরের মধ্যে চট্টগ্রামের দুঃখ জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। কিন্তু জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নগরের বাসিন্দারা।

নগরের বিভিন্ন খালে চলছে প্রতিরোধদেয়ালের নির্মাণকাজ। পাঁচটি খালের মুখে দেওয়া হচ্ছে জলকপাট। এসব কারণে খালগুলোর বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ দেওয়া হয়েছে। অনেক জায়গায় খালের ভেতরই রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এতে পানি চলাচলের পথ সরু হয়ে গেছে।

পানি নিষ্কাশনের আরেক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম রাজাখালী খালের একটি অংশও আগাছা ও কচুরিপানায় ভর্তি হয়ে আছে। কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত এই খালের মুখে চলছে জলকপাটের নির্মাণকাজ। কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত মরিয়মবিবি খাল ও টেকপাড়া খালের ভেতরও বাঁধ দেওয়া হয়েছে।নগরের ২ নম্বর গেট ও মুরাদপুর এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চশমা খাল। কিন্তু খাল প্রশস্ত করতে ও প্রতিরোধদেয়াল নির্মাণের জন্য বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে থাকছে।