স্বাধীনতাস্তম্ভে কাটা হচ্ছে গাছ
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এসব উন্নয়নকাজের জন্য কত গাছ কাটা হয়েছে বা কাটতে হবে, সে হিসাব নেই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে।রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হাঁটাপথ, খাবারের দোকানসহ নানান স্থাপনা তৈরির সময় কোনো গাছ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে, তা কেটে ফেলা হচ্ছে।
প্রকল্পের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, “পরিকল্পিত সবুজায়নের অংশ হিসেবে অপ্রয়োজনীয় গাছ কাটা হচ্ছে। গাছ কাটা হলেও নতুন করে ফুল গাছ লাগানো হবে। সারা বছরই ফুটবে নানান ফুল। ফুল গাছের পরিচর্যায় মালি থাকবে। ঘাসে পা না দিয়েই মানুষ যাতে হাঁটতে পারে, তাই হাঁটাপথের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে।প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জনসমাগম হলে মানুষ যাতে উন্নত মানের খাবার পায়, তাই উদ্যানে সাতটি ফুড কিয়স্ক তৈরি করা হচ্ছে। নারী, শিশু, প্রতিবন্ধীসহ সবার প্রয়োজন অনুযায়ী শৌচাগার, বৃষ্টি হলে শেডের নিচে আশ্রয় নেওয়ার ব্যবস্থা এবং টিকিট কাউন্টার হচ্ছে একই ছাদের নিচে।“
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পটির উদ্যোগী মন্ত্রণালয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির তৃতীয় পর্যায়ের নকশা প্রণয়নকারী সংস্থা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের স্থাপত্য অধিদপ্তর। আর প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত অধিদপ্তর আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণের প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজে খরচ হয় ২৬২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০১৮ সাল থেকে প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের কাজে খরচ হবে আরও ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। গত ২৩ বছর ধরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেড় শ ফুট উচ্চতার কাচের তৈরি স্বাধীনতাস্তম্ভ, উদ্যানের উত্তর প্রান্তের শিখা চিরন্তন, জলাধার, ভূগর্ভস্থ জাদুঘর, দেয়ালে ম্যুরাল স্থাপন, বাংলা একাডেমির সামনের অংশে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ, নতুন ফটক, উদ্যানের চারপাশে স্টিলের বেড়া নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজ হয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ে।
গত মঙ্গল ও বুধবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, খাবারের দোকানের জন্য কয়েকটি স্থাপনা তৈরির কাজ চলছে। হাঁটাপথের কিছু অংশে ইট বিছানো হয়েছে। কিছু অংশের মাটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে। আর এই হাঁটাপথের নকশার মধ্যে যে গাছগুলো পড়েছে তার বেশ কিছু গাছ কাটা হয়েছে। উদ্যানের বেশ কিছু গাছে ক্রসচিহ্ন দেওয়া।
৫ মে বুধবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে মন্ত্রণালয় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘কিছু গাছ’ কাটা হলেও প্রায় এক হাজার গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিভিন্ন জায়গায় কর্তৃপক্ষের নাম দিয়ে নোটিশ টানানো হয়েছে। তাতে বড় একটি গাছের ছবি এঁকে লেখা হয়েছে—ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় উদ্যানের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিকল্পিত সবুজায়ন ও পরিবেশ উন্নয়নের কাজ চলমান। সবার সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, “গাছ কাটা বিষয়ে আমরা লিখে পাঠাইছি, প্লিজ তাই লিখেন। কতগুলো গাছ কাটা হলো, সে হিসাব আমাদের কাছে নাই। গুইনা আসতে বলেন। আপনাদের কথা শুনলে কোনো কাজই করা যাবে না। এখানে কোনো দিনই উদ্যান ছিল না। রেসকোর্স ময়দানে ঘোড়দৌড় হতো। জনসভা হইছে। মিথ্যাচার করে বলা হচ্ছে বন ছিল। আমরাই হাজার হাজার গাছ লাগাইছি। আরও লাগাবো।“
পরিবেশবিদ, নগরবিদ, প্রকৃতিপ্রেমীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। গাছ কেটে খাবারের দোকান বা অন্যান্য স্থাপনা তৈরির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে যার মতো করে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করছে। নগরবিদদের দেওয়া হিসাব বলছে, প্রতিটি বড় শহরে ২০ শতাংশ সবুজ স্থান থাকা প্রয়োজন। কিন্তু কাগজে-কলমে নতুন ঢাকায় আছে ১২ আর পুরান ঢাকায় ৫ শতাংশ। বাস্তবে তার পরিমাণ আরও কম।