মৃত্যুর বন্যা বইছে ভারতে

ভারতে করোনা মহামারি শুরুর পর এই প্রথম দেশটিতে এক দিনে সাড়ে তিন হাজারের বেশি রোগীর মৃত্যু হলো। এক দিনে মৃত্যুর এই রেকর্ডসংখ্যা নিয়েই ভারতে করোনায় মোট প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার ৭০১ জন। বুধবার রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভারতে এক দিনে ৩ হাজার ৫৩৫ জন করোনায় মারা গেছেন। আগের দিন মঙ্গলবার রাত ১১টা পর্যন্ত ভারতে এক দিনে ৩ হাজার ৩০৬ জন করোনায় মারা যান। শুধু তা-ই নয়, বিশ্বের কোনো দেশে এখন পর্যন্ত এক দিনে এত করোনা রোগী আগে কখনো শনাক্ত হয়নি। বিশ্বের কোনো দেশে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্তের রেকর্ডটি গত বৃহস্পতিবারের আগপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের দখলে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে গত জানুয়ারিতে এক দিনে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

ওয়ার্ল্ডোমিটার শুরু থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ কোটি ২ লাখ ১৬ হাজার ৫৯০। বিশ্বে করোনায় মোট মারা গেছে ৩১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৭৩ জন।

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রয়েছে ভারত। ভারতের পর রয়েছে ব্রাজিল। সম্প্রতি সংক্রমণের দিক দিয়ে ব্রাজিলকে টপকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে ভারত। ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৪৫ লাখ ২৩ হাজার ৮০৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৩ জন।

ভারতে করোনার সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করায় দেশটি তার সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অক্সিজেন, জরুরি ওষুধ, হাসপাতালে শয্যার সংকটসহ নানা সমস্যায় দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম।

দেশটিতে করোনা রোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকায় চাপ সামাল দিতে হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিদিন অনেক রোগী মারা যাচ্ছেন শুধু অক্সিজেনের অভাবে। বিদেশ ও দেশের অন্য এলাকা থেকে অক্সিজেন এনে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।এমন পরিস্থিতিতে ভারতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ভারতের করোনা সংকটে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, সৌদি আরব, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি দেশ ও সংস্থা জরুরি চিকিৎসাসহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বিদেশি সহায়তা ভারতে পৌঁছানো শুরু হয়েছে।

ভারতে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। তারপর রয়েছে কেরালা, কর্ণাটক, উত্তর প্রদেশ, তামিলনাড়ু, দিল্লি, অন্ধ্র প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ। ছত্তিশগড়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট ও হরিয়ানার পরিস্থিতিও অবনতিশীল। গতকাল স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে শনাক্ত হয়েছে ৬৩ হাজার ৩০৯ জন। কর্ণাটকে ৩৯ হাজার ৪৭ জন। কেরালায় ৩৫ হাজার ১৩ জন।