শতবর্ষে পা রাখলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শতবর্ষপূর্তি হলো দেশের এই শীর্ষ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান শুরু হয়।হাটি হাটি পা পা করে আজ ১০০ বছরে পা দিলো ঐতিহ্যের এ বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিকদের বড় অংশ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, পড়িয়েছেন। ১৯৫২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এ দেশের সব গণ-আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভূমিকা ছিল অসামান্য। এখন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হলো, জ্ঞানচর্চা, গবেষণা ও পাঠদানের মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যাশিত উন্নতি হয়নি। বরং অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়েছে।

বিভাগ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে, বিপরীতে মানের দিক দিয়ে অবনমন ঘটেছে। শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এসেছে বহুবার।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষের সংকট প্রবল। আবাসনসংকট প্রবল। খাবারের মান নিম্ন। হল নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন। তাদের হাতে শিক্ষার্থীদের নিগৃহীত হওয়ার অভিযোগ বহু বছরের। কিন্তু সেগুলোর সমাধান নেই, উদ্যোগও তেমন একটা চোখে পড়ে না।

উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জ্ঞানচর্চা ও গবেষণাকে জোরদার করার তাগিদ খুব গভীরভাবে অনুভব করছে। জ্ঞানচর্চার বৈশ্বিক মাত্রায় পৌঁছানোর জন্য আমাদের যে ঘাটতি আছে, সেটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার আগে খুব ভালো মৌলিক ও প্রায়োগিক আন্তর্জাতিক মানের গবেষণার ফল প্রত্যাশা করাটা কঠিন বিষয়।“

১৯২১ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আলোচনা শুরু হয় বঙ্গভঙ্গ রদের পর।  স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী বইয়ে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন লিখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে। পূর্ববঙ্গে মুসলমান মধ্যশ্রেণি বা পেশাজীবী শ্রেণি গড়ে তুলেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পূর্ববঙ্গ, পূর্ব পাকিস্তান ও বর্তমান বাংলাদেশের প্রশাসন, স্বাধীন পেশাজীবী, রাজনীতিবিদ—অধিকাংশই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখন যাত্রা শুরু করে, তখন অনুষদের সংখ্যা ছিল তিনটি—কলা, বিজ্ঞান ও আইন। বিভাগ ছিল ১২টি—সংস্কৃতি ও বাংলা, ইংরেজি, শিক্ষা, ইতিহাস, আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ, পার্সি ও উর্দু, দর্শন, অর্থনীতি ও রাজনীতি, রসায়ন, গণিত ও আইন। শুরুতে শিক্ষক ছিলেন ৬০ জন, শিক্ষার্থী ৮৭৭ জন।

এখন বিভাগ দাঁড়িয়েছে ৮৪টিতে। ইনস্টিটিউট হয়েছে ১৩টি। শিক্ষক এখন ১ হাজার ৯৯২ জন ও শিক্ষার্থী ৩৭ হাজার ১৮ জন। ৫৬টি গবেষণাকেন্দ্র হয়েছে। তবে তেমন কোনো গবেষণা না থাকার যুক্তি তুলে ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচনা বেশি হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কেউ কেউ মনে করেন, মানের দিক দিয়ে বাংলাদেশে সব ক্ষেত্রে যে অবনমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার বাইরে নয়। তবে দেশে এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই এগিয়ে। গবেষণাপত্রের সংখ্যায় ও বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিংয়ে দেশের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই সবার ওপরে থাকে।